কল লেটার পেলেও ইন্টারভিউতে যেতে পারেননি অর্করঞ্জন দাস। —নিজস্ব চিত্র
বছরখানেক আগে চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বছর ঘুরে যাওয়ার পর জানতে পারলেন, সেই পরীক্ষায় উতরে গিয়েছেন। ইন্টারভিউয়ের ডাক এসেছে। তবে ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারেননি রায়গঞ্জের বাসিন্দা অর্করঞ্জন দাস। কারণ, ইন্টারভিউয়ের দিন পেরিয়ে যাওয়ার দু’দিন পরে, বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে কল লেটার। গোটা ঘটনায় উত্তর দিনাজপুর জেলার ডাক ব্যবস্থার বেহাল দশা ফুটে উঠেছে।
মৌখিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় মোহনবাটীর বাসিন্দা অর্করঞ্জনের হা-হুতাশ না কমলেও ভাবলেশহীন রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘরের হেড পোস্টমাস্টার রতনকৃষ্ণ রায়। ডাকঘরের কর্মীর অপ্রতুলতা না মিটলে এমন ঘটনা যে ভবিষ্যতে আরও ঘটবে, তা জানিয়েছেন তিনি।
অর্করঞ্জন জানিয়েছেন, গত বছরের ১ ডিসেম্বর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কো-অপরেটিভ সার্ভিস কমিশনের লিখিত পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। তার পর থেকে বছর গড়ালেও পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে কমিশনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। গত কাল তাঁদের বাড়িতে একটি স্পিড পোস্ট এসে পৌঁছয়। তাতেই ছিল অর্করঞ্জনের ইন্টারভিউয়ে বসার ডাক। সেই চিঠি পড়ে তিনি জানতে পারেন, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছেন। ইন্টারভিউতে যাওয়ার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছে। তবে ইন্টারভিউ ছিল দু’দিন আগে, ১০ নভেম্বর। ডাকঘরের গাফিলতিতে চাকরির সম্ভাব্য সুযোগ হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ অর্করঞ্জন। তবে কার গাফিলতিতে মৌখিক পরীক্ষার দু’দিন পরে সেই চিঠি এল এবং গোটা ঘটনায় কাকেই বা কাঠগড়ায় তুলবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে রায়গঞ্জের মুখ্য় ডাকঘরের হেড পোস্টমাস্টারের অভিযোগ জানিয়েছেন অর্করঞ্জন।
আরও পড়ুন: বাংলায় আল কায়দার নিশানায় একাধিক রাজনীতিক, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সতর্ক করলেন গোয়েন্দারা
স্পিড পোস্টের মাধ্যমে আসা অর্করঞ্জনের ইন্টারভিউয়ে বসার কল লেটার। —নিজস্ব চিত্র
এ ক্ষেত্রে ডাকঘরের গাফিলতির প্রসঙ্গ উঠলেও কম সংখ্যক কর্মীর থাকাতেই যে এমনটা হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন রতনকৃষ্ণ। তিনি বলেন, “রায়গঞ্জ শহরে ১৩টি বিটের মধ্যে ৫টিতে কর্মী রয়েছে। বাকি ৮টিতে কোনও কর্মী নেই। ওই কর্মীরাই ১৩টি বিটের কাজকর্ম সামালাচ্ছেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেই বহু চিঠি বিলি করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: পর পর ‘ইঙ্গিতবহ’ টুইট, এ বার কি শেষ পর্যন্ত সোমেন-পুত্রও মমতার তৃণমূলের পথে
কেন এই বেহাল দশা সে কারণও জানিয়েছেন রতনকৃষ্ণ। তাঁর কথায়, “আগে এই বিটগুলোতে আউটসোর্স করা হত। অর্থাৎ বাইরের লোক নিয়োগ করে চিঠি বিলি করা হত। কিন্তু, কিছুদিন যাবৎ তা বন্ধ করে দিয়েছে ডাক বিভাগ। ফলে ডাকঘরে চিঠি এসে পড়ে থাকলেও তা বিলি করা সম্ভব হচ্ছে না।” অর্করঞ্জনের উদ্দেশে লেখা চিঠিও গত অক্টোবর মাস থেকে ডাকঘরে পড়েছিল। কর্মীর অভাবেই তা বিলি হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। ফলে শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ অথবা আউটসোর্স করার অনুমতি না দিলে এমন ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে বলে জানিয়েছেন রতনকৃষ্ণ।
ডাক ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা স্বীকার করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করার কথা জানিয়েছেন অর্করঞ্জন। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।