(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে ফের ‘যাত্রা’ শুরু করছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আগামী ১৪ জানুয়ারি, রবিবার উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে পশ্চিম উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করবেন ওয়ানাড়ের কংগ্রেস সাংসদ। এ বার তাঁর যাত্রাপথে পড়বে বাংলাও।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, বাংলায় মোট পাঁচ দিন থাকবেন রাহুল। পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলার ৫২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। পাশাপাশি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম এ-ও বলেছেন যে, এই যাত্রায় ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত সব দলকে কংগ্রেসের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হবে। রাহুল যাত্রার নেতৃত্ব দিলেও সব দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানাবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে।
‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলের মধ্যে বাংলার শাসকদল তৃণমূল রয়েছে, রয়েছে সিপিএম-ও। প্রশ্ন হল, বাংলায় রাহুল গান্ধীর যাত্রায় আমন্ত্রণ পেলে কী করবে তৃণমূল? কী-ই বা অবস্থান নেবে সিপিএম?
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীর বিষয়। যদি আমন্ত্রণ আসে, সে ক্ষেত্রে দলের অবস্থান কী হবে, তা সর্বোচ্চ নেতৃত্বই ঠিক করবেন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘আমাদের লড়াই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই লড়াইয়ে আমরা কখনওই দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াব না।’’ তার অর্থ কী? সেলিম তা স্পষ্ট করে না বললেও এটা পরিষ্কার যে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেসের কর্মসূচিতে তৃণমূল গেলে তাঁদের দল সেখানে শামিল হবে না।
প্রসঙ্গত, মাস দেড়েক আগে তৃণমূল ও কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ফোনালাপে বাংলায় জোটের সলতে পাকতে শুরু করেছিল বলে দাবি করেছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অনেক নেতা। কিন্তু ক্রমেই তা উবে যেতে থাকে। কাকতালীয় হলেও বাস্তব, বৃহস্পতিবার যখন দিল্লি থেকে জয়রাম ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলির মধ্যে ঐক্যের কথা বলেছেন, প্রায় একই সময়ে বহরমপুর থেকে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। পাশাপাশি, বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি।
কংগ্রেসের সূচি অনুযায়ী মেঘালয় থেকে জানুয়ারির শেষে বাংলায় ঢুকবে রাহুলের যাত্রা। তবে কোন সাত জেলা ছুঁয়ে রাহুল বিহারে প্রবেশ করবেন, তা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, মূলত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকেই ছুঁয়ে যাবে রাহুলের যাত্রা। যার মধ্যে অবশ্যই মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ থাকবে। তবে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সঙ্গে এ বারের রাহুল-যাত্রার মৌলিক ফারাক রয়েছে। তা হল, এ বার পুরো রাস্তা রাহুল হেঁটে যাবেন না। বেশির ভাগ রাস্তাই যাবেন গাড়িতে। তবে মাঝে মাঝে পদযাত্রা, সভা এবং মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কর্মসূচি থাকবে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনকেও আমন্ত্রণ জানাবে কংগ্রেস। জয়রাম বলেন, ‘‘কেউ কেউ প্রচার করছেন রাহুল গান্ধীর যাত্রা অরুণাচল প্রদেশে যাবে না। দয়া করে ভুয়ো খবর দেবেন না। অরুণাচল-সহ ১৫টি রাজ্য ছুঁয়ে যাবে যাত্রা। ৬৬ দিনে অতিক্রম করবে ৬,৭০০ কিলোমিটার পথ।’’ জয়রাম এ-ও জানিয়েছেন, কন্টেনারেই রাত্রিবাস করবেন রাহুল। তবে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময়ে যেমন প্রচুর সংখ্যক স্থায়ী পদযাত্রী ছিলেন, এ বার তা হবে না।