রবি তৃণমূলে, কাটোয়ায় প্রায় মুছে গেল কংগ্রেস

প্রত্যাশিতই ছিল। শেষমেশ শুক্রবার তৃণমূলে যোগ দিলেন কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। পুরভোটের দিন দলীয় কর্মী খুনের মামলায় যাঁর নাম দিয়েছিল তৃণমূল, তাঁকেই সাদরে বরণ করে নিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। রবিবাবু শুধু কাটোয়ার বিধায়ক নন, বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের শেষ খুঁটি ছিলেন তিনি। এ দিন তাঁর সঙ্গে কাটোয়া পুরসভার সব কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। একই রাস্তা নিয়েছেন কাটোয়ার প্রয়াত কংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্তের স্ত্রী, দাঁইহাটের এক মাত্র কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েক জন কংগ্রেস সদস্যও। কার্যত সাইনবোর্ড হয়ে গেল কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

প্রত্যাশিতই ছিল। শেষমেশ শুক্রবার তৃণমূলে যোগ দিলেন কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। পুরভোটের দিন দলীয় কর্মী খুনের মামলায় যাঁর নাম দিয়েছিল তৃণমূল, তাঁকেই সাদরে বরণ করে নিলেন রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

রবিবাবু শুধু কাটোয়ার বিধায়ক নন, বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের শেষ খুঁটি ছিলেন তিনি। এ দিন তাঁর সঙ্গে কাটোয়া পুরসভার সব কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। একই রাস্তা নিয়েছেন কাটোয়ার প্রয়াত কংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্তের স্ত্রী, দাঁইহাটের এক মাত্র কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েক জন কংগ্রেস সদস্যও। কার্যত সাইনবোর্ড হয়ে গেল কংগ্রেস।

এ দিন তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন রবিবাবু। দলের অন্যতম সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। গত সপ্তাহে কংগ্রেস কর্মীদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং কাটোয়ায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ বন্ধের আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রবিবাবু। তবে কি মামলা তোলার আশ্বাস পেয়েই দলবদল? রবিবাবুর জবাব, ‘‘খুনের মামলা তো সহজে তোলা যায় না! তা প্রত্যাহারের পদ্ধতি রয়েছে।’’ পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমরা ওঁকে আশ্বস্ত করেছি, আইন আইনের পথে চলবে।’’

Advertisement

রবিবাবুর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা অবশ্য নতুন নয়। বছর দেড়েক আগে নদিয়ার শান্তিপুরে ‘বন্ধু’ অজয় দে কংগ্রেস ছাড়ার পরে তিনিও তৃণমূলে যাচ্ছেন বলে জোর আলোচনা হয়েছিল। রবিবাবু শেষ পর্যন্ত যাননি। তবে কেন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন?

কাটোয়ার কংগ্রেস সূত্রের দাবি— প্রথমত, পুরভোটের সময় থেকেই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। নেতৃত্ব তাঁদের ভরসা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিল। দ্বিতীয়ত, টানা বিশ বছর কাটোয়া পুরসভায় একাধিপত্য বজায় রাখলেও এ বার তৃণমূলের কাছে অর্ধেক আসন হারায় কংগ্রেস। রবিবাবুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ অমর রাম তৃণমূলে চলে যাওয়ায় যে সাংগঠনিক ক্ষয় শুরু হয়েছিল, তা সামাল দেওয়া যায়নি। কংগ্রেস যে শহরের ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তৃতীয়ত, এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বোঝা গিয়েছিল, গ্রামীণ ভোট তৃণমূলের দিকে অনেকটা ঝুঁকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরের বছর কাটোয়া বিধানসভা আর রবিবাবুর জন্য ‘নিরাপদ’ নেই বলে অনেকেই মনে করছেন।

রবিবাবু কি কংগ্রেস বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দেবেন? ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখে কাটোয়ার বিধায়ক শুধু বলেন, ‘‘এখনও এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’’ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার আক্ষেপ, ‘‘এটা আমাদের দলের পক্ষে বিরাট ক্ষতি। ওঁকে ধরে রাখতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা।’’

তবে রবিবাবু তৃণমূলে যাওয়ায় সে দলের সবাই যে স্বস্তিতে, এমনটাও নয়। অমরবাবুর মতো যাঁরা তাঁর ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে ইতিমধ্যেই নানা পদে ক্ষমতাসীন, মাথার উপরে ফের একই ছায়া ফিরে আসা তাঁদের পছন্দ না-ও হতে পারে। অমরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement