মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোরপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণার পরে ফের তুঙ্গে উঠল রাজনৈতিক বিতর্ক। মৃত্যুদণ্ড দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোরপাধ্যায়ের আশঙ্কা, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী কিছু দিন পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধ করতে পারে। পাল্টা বিজেপির দাবি, সঞ্জয়ের মুখ বন্ধ করার জন্যই তড়িঘড়ি তার ফাঁসি চাইছে রাজ্য সরকার! অন্য দিকে, সিপিএম ও কংগ্রেসের দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের দেওয়া তথ্য-প্রমাণের গভীরতা না-থাকায় আদালত যা রায় দিয়েছে, তার ‘দায়’ বিজেপিকেই নিতে হবে। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তোলার সুযোগ করে দিয়েছে এবং তিনি তার সদ্ব্যবহার করছেন বলেই তাদের মত।
শিয়ালদহের বিশেষ আদালতের রায়ের পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাজ্য সরকার হাই কোর্টে যাবে। রাজ্য সরকার যেমন মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে আবেদন করেছে, তেমনই মালদহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘‘যাবজ্জীবন মানেটা কী? আমরা অনেক মামলায় দেখেছি, দু’তিন বছরে বেরিয়ে গিয়েছে। প্যারোলে বেরিয়ে যায়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে অন্যায় করলেও ছেড়ে দেব?’’
এই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই। নিহত চিকিৎসকের পরিবার, সহপাঠী চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজের অভিযোগ, গোড়াতেই তদন্ত ধামাচাপা দিতে সচেষ্ট ছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় পাল্টা সুর চড়িয়েছেন। সেই সূত্রেই আর জি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরেই বিধানসভায় রাজ্য সরকারের পাশ করা ‘অপরাজিতা’ বিলের প্রসঙ্গ এ দিন টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘মা-বোনেদের সম্মানের স্বার্থে বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ করেছি। সেখানে আমরা মৃত্যুদণ্ড রেখেছি। অ্যাসিডেও অনেক সময় মুখ-টুখ পুড়িয়ে দেয়, তার জন্যও আমরা শাস্তি রেখেছি। সে বিল এখনও পাশ করেনি কেন্দ্রের সরকার, ফেলে রেখে দিয়েছে।’’ পশ্চিমবঙ্গের ওই আইন দেশে ‘মডেল’ হিসেবে গৃহীত হতে পারে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। নিহত চিকিৎসকের বাড়ি গিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে আইনি লড়াই ও সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ‘‘ও সব নাটক! উচ্চতর আদালতে আবেদন করতে পারে দোষী সাব্যস্ত পক্ষ, নির্যাতিতার পরিবার এবং তদন্তকারী সংস্থা। এখানে রাজ্য সরকার হাই কোর্টে গিয়েছে রাজনৈতিক কারণে।’’ আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, বলেন, ‘‘পুলিশের গাফিলতি, প্রমাণ লোপাট থেকে নজর ঘোরাতে ফাঁসি দিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই জন্য তড়িঘড়ি তিনি হাইকোর্টে চলে গেলেন! সঞ্জয় যদি মুখ খোলে, তা হলে তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী) সরকার বিপদে পড়ে যাবে। তাই তড়িঘড়ি তিনি সঞ্জয়কে ধনঞ্জয় করে দিতে চাইছেন!’’
এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কামদুনি-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী এমন অফিসারকে দিয়ে মামলা সাজিয়েছিলেন যে দোষীদের শাস্তি হাই কোর্টে গিয়ে কমে গেল! সেই একই অফিসার আর জি করে তথ্য-প্রমাঁ ‘সামলাতে’ নিযুক্ত ছিলেন। এখন ফাঁসি, ফাঁসি বলে হইচই করছেন! সিবিআই ব্যর্থ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী এই সুযোগ পেয়েছে, সেই সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘যাবজ্জীবনের আসামিকে ছাড়া পেতে গেলে রাজ্যের সম্মতি লাগবে। মুখ্যমন্ত্রী কি সেটার জন্য অপেক্ষা করছেন? নাকি যত তাড়াতাড়ি সঞ্জয়ের ফাঁসি হয়, তত অন্যদের ঝুঁকি কমে যায়!’’ একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের দাবি, ‘‘আবার সেই তরজার নাটক! সিবিআই যে তথ্য-প্রমাণে গভীরতা আনতে পারেনি, তার দায় বিজেপি নেতারা নেবেন না? রাজ্য সরকারের পুলিশ-প্রশাসন প্রমাণ লোপাট করেছে আর কেন্দ্রের সিবিআই তদন্ত লঘু করেছে। তার পরে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আবার নাটক শুরু হয়েছে!’’