ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। —ফাইল ছবি।
হাসপাতাল-সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দেশের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি নিজেই গত শুনানির প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘১৪ দিনের মধ্যে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার এবং হাসপাতালে সিসিটিভি বসানো হবে।’’ পাশাপাশি রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ‘রাত্রি সাথী’ নামের একটি বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সিকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গেই নিরাপত্তার বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক তথা ঠিকাকর্মী নিয়োগের প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের মামলায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন যিনি, তিনি কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। নিরাপত্তার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তো? নিরাপত্তার অভাব ছিল বলেই তো ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সারা হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন? যেখানে সব সময় কাজ চলছে, ডাক্তারেরা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেখানে এমন নিরাপত্তা কেন?’’
প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে রাজ্যের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। ‘রাত্রি সাথী’ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন রাজ্যের আইনজীবী সিব্বল। প্রধান বিচারপতি পাল্টা বলেন, ‘‘চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে কী ভাবে তাঁদের থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তার আশা করেন?’’ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, ‘‘রাজ্যের এ বিষয়ে ভাবা উচিত। কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে পারে রাজ্য?’’
হাসপাতালগুলিতে নিদেনপক্ষে পুলিশ রাখার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা, সরকারি হাসপাতালগুলির পরিসংখ্যান এবং সেখানে কমবয়সি মহিলাদের কাজের বিষয় উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘২৮টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে রাজ্যে। আরও ১৭টি হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে ১৮-২৩ বছরের তরুণীরা কাজ করেন। তাঁদের নিরাপত্তায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হলে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। সরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে পুলিশকর্মী রাখা উচিত।’’
রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘স্বাস্থ্যসচিবকে বলুন মহিলা ডাক্তারদের বিশ্রামগারে যেন বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা থাকে।’’ রাজ্য জানিয়েছে, রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামকক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। আরজি কর হাসপাতালে এখন ৪১৫টি ক্যামেরা লাগানো হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য। কিন্তু প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এখন বলছেন ৪১৫টি ক্যামেরা লাগানো হবে। আগে মাত্র ৩৭টি ছিল!’’