প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবারের মতো আরজি কর মামলার শুনানি শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে। উঠে গেলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। এজলাস ছাড়লেন আইনজীবীরাও।
এক আইনজীবীকে ধমক দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। বিচারের পদ্ধতি মেনে চলুন। আমরা চিকিৎসকদের চিন্তার বিষয়গুলি দেখছি। আপনি যদি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের নির্দেশ দিতে হবে, সেটা হতে পারে না। এটা আমাদের কাজ নয়।”
জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীর উদ্দেশে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “জেনারেল বডির মিটিং কখন হবে, জানানো হোক।” জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ বলেন, “আমরা তা জানতে পারব না।”
মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। তিনি বলেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের আস্থা অর্জনের জন্য রাজ্যের সঙ্গে তাঁদের যে বোঝাপড়া, তা নথিবদ্ধ রাখা হোক। আমরা জানি, আমাদের সব দাবি এক দিনে পূরণ হবে না। জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফিরতে চান। কিন্তু বিষয়ে এখনই নজর দেওয়া দরকার।” কর্মবিরতি তোলা প্রসঙ্গে ইন্দিরা বলেন, “জুনিয়র ডাক্তারেরা জেনারেল বডির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার জন্য একটু সময় লাগবে।”
সরকারি হাসপাতালে অন্তত পুলিশকর্মী রাখা উচিত বলে মন্তব্য করলেন প্রধান বিচারপতি।
আরজি কর হাসপাতালে আগে ৩৭টি সিসি ক্যামেরা ছিল। মঙ্গলবার রাজ্য জানায় আরও ৪১৫টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে ওই হাসপাতালে। প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “এখন বলছেন আরজি কর হাসপাতালে ৪১৫টি ক্যামেরা লগানো হবে। আগে মাত্র ৩৭টি ছিল?”
হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে রিপোর্ট দিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। রাজ্য আদালতে জানিয়েছে, রাজ্যের সব হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রাম কক্ষ, সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। চিকিৎসকদের ডিউটি রুমে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “২৮টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে রাজ্যে। আরও ১৭টি হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে ১৮-২৩ বছরের তরুণীরা কাজ করেন। তাঁদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাঁদের নিরাপত্তায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হলে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।”
সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “ওই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে কী ভাবে তাঁদের থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তার আশা করেন? কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে পারে রাজ্য? রাজ্যের এই বিষয়ে ভাবা উচিত।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “অভিযুক্ত পুলিশের এক জন। তিনি এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। নিরাপত্তার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তো? নিরাপত্তার অভাব ছিল বলেই তো ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সারা হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়েছেন।” রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন? যেখানে সব সময় কাজ চলছে। ডাক্তাররা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করছেন। সেখানে এমন নিরাপত্তা কেন?”
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “গত শুনানিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম ডাক্তারদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে। ওই বিষয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে?” রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “আমরা পদক্ষেপ করেছি। আদালতকে ওই বিষয়ে জানাচ্ছি।”
সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলার পরেই বিজ্ঞপ্তির অংশ মুছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলেন রাজ্যের আইনজীবী। রাজ্য জানায়, ওই বিজ্ঞপ্তির যে ৫ এবং ৬ নম্বর অংশ নিয়ে আপত্তি রয়েছে, তা মুছে ফেলা হবে।
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়ে রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তা সঠিক করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি ঠিক করতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়ার। আপনারা বলতে পারেন না, মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না।” প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “বিমানচালক, সেনাতে অনেক মহিলা রাতে কাজ করেন। এই বিজ্ঞপ্তি কেন?” প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ১৯ অগস্ট এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজ্য।
চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের’ আইনজীবী করুণা নন্দী সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে বলা হয়েছে। এটা ঠিক নয়। সিনিয়র ডাক্তারেরা কাজ করছেন।”
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার দিন অকুস্থলে কারা ছিলেন, সেই সব নাম জমা দিতে পারবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। একই সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থাকে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়গুলি নিয়ে সিবিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।
উইকিপিডিয়াকে নির্যাতিতার নাম মুছে ফেলতে হবে। নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “নির্যাতিতার বাবা যে সব বিষয় তুলেছেন, সিবিআইয়ের সেগুলি দেখা উচিত।”
জনস্বার্থ মামলাকারী বিজয়কুমার সিঙ্ঘলের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে বলেন, “কলকাতা পুলিশ কেন ২৭ মিনিটের ফুটেজ দিল? বাকি ফুটেজ দিল না কেন?” তাঁর অভিযোগ, সিজ়ার লিস্টে নির্যাতিতার জিন্স এবং অন্তর্বাস নেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, নমুনা কবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল? এডুলজির দাবি, সিসি ক্যামেরার ডিভাইস ব্লক করা হয়ে থাকতে পারে।
কত ক্ষণের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ? আদালতে পরস্পরবিরোধী দাবি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, সাত-আট ঘণ্টার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “তা হলে সিবিআই কেন বলছে, ২৭ মিনিটের ফুটেজ দেওয়া হয়েছে? এখানে বলা হচ্ছে একটি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে।” প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বরের শুনানিতেই সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছিল, রাজ্যের তরফে ২৭ মিনিটের ফুটেজ দেওয়া হয়েছে।