—প্রতীকী চিত্র।
রাতের শহরে অবৈধ ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে আর চাকায় কাঁটা নয়। তার বদলে নতুন অ্যাপের মাধ্যমে বেআইনি পার্কিং বাবদ জরিমানার বার্তা পৌঁছে যাবে গাড়ির মালিকের মোবাইলে। এমনই অভিনব অ্যাপ আনছে কলকাতা পুরসভার পার্কিং দফতর। এর মাধ্যমে অবৈধ ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির ছবি তুলে, সেই ছবি-সহ জরিমানার মেসেজ পাঠানো হবে গাড়ির মালিকের মোবাইলে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুজোর পরেই এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হবে। যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান পুর আধিকারিকদের একাংশই। প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাপ চালু হলে অবৈধ পার্কিং বাবদ ফি আদায়ের পরিমাণ কমে যাবে না তো?
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এত দিন রাতে বেআইনি পার্কিং করলে গাড়ির চাকায় কাঁটা লাগিয়ে দেওয়া হত। ফলে, গাড়ির মালিকেরা বাধ্য হয়ে সেই কাঁটা খোলাতে তড়িঘড়ি পুরসভায় ছুটতেন। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে মালিকের মোবাইলে জরিমানার মেসেজ পাঠানো হলেও তা জমা দিতে গড়িমসি করতে পারেন অনেকে। পার্কিং দফতরের আধিকারিকদের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে অবৈধ পার্কিং বাবদ জরিমানা অনাদায়ী থেকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা নিয়ে আপাতত ধন্দে পুর পার্কিং দফতরের আধিকারিকদের ওই অংশ।
পুরসভা সূত্রের খবর, রাতের শহরে ১৪৪টি ওয়ার্ড ঘুরে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুরসভার তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের তরফে সম্প্রতি পার্কিং দফতরের ৯ জনকে এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওই ন’জনের মধ্যে পাঁচ জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গোটা শহরে মাত্র ন’জনকে দিয়ে এই ব্যবস্থা কতটা ফলপ্রসূ হবে? পুর পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, এ বার থেকে ওই ন’জন রাতের শহরে ঘুরে ঘুরে কোথাও বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে দেখলে তার ছবি তুলবেন। পুর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার দফতরে নতুন অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে। এর মাধ্যমে অবৈধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে সেটির মালিকের মোবাইলে জরিমানার মেসেজ পাঠানো হবে।
যদিও এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান পার্কিং দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। অনেকের আশঙ্কা, অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ির মালিকের মোবাইলে জরিমানা আদায়ের মেসেজ পাঠালেও তিনি সেই টাকা না-ও জমা দিতে পারেন। যদিও পার্কিং দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘নতুন অ্যাপ চালু হলে গাড়ির মালিক কোনও ভাবেই অবৈধ পার্কিংয়ের জরিমানা ফাঁকি দিতে পারবেন না। গাড়ি বিক্রি থেকে শুরু করে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, দূষণ নিরোধক শংসাপত্র সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করার সময়ে তাঁকে জরিমানা জমা দিতেই হবে।’’ নিয়মমতো, রাতের শহরে রাস্তায় গাড়ি রাখলে পুরসভাকে মাসে ৫০০ টাকা দিতে হয়। পরিবর্তে গাড়ির মালিককে স্টিকার দেওয়া হয়। আবার রাতে বেআইনি পার্কিং করলে গাড়িপিছু এক হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করে পুরসভা।
উল্লেখ্য, দিনের বেলায় পুরসভা অনলাইনে পার্কিং ফি নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থাকে ই-পস মেশিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, বছর ঘুরলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই মেশিন অনেকে ব্যবহার করছে না। ফলে খাতায়কলমে অনলাইনে পার্কিং ফি আদায় চালু হলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো। এ নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘ই-পস মেশিন যাতে পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সংস্থা ব্যবহার করে, সে বিষয়ে মেয়র পারিষদ, চিফ ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলব। না হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’