কোভিডের সময়ে কলকাতা পুরসভার কেনা জীবাণুমুক্ত করার সেই যন্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।
করোনার সময়ে শহর জীবাণুমুক্ত করতে কেনা হয়েছিল ১৮০টি আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন। যার প্রতিটির দাম ছিল ২২ হাজার টাকা। অথচ তিন বছর আগে কেনা যন্ত্রগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর কি কোভিড আবহে আনানো ওই যন্ত্রগুলিকে কোনও ভাবে কাজে লাগাতে পারে?
স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য যুক্তি, জীবাণুনাশক যন্ত্রের মাধ্যমে ডেঙ্গির বাহক মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা ধ্বংস করা যাবে না। তা হলে? উদ্যানবিদেরা মনে করছেন, পুরসভার উদ্যান দফতর মনে করলে ওই সমস্ত পড়ে থাকা যন্ত্রগুলি গাছে স্প্রে করার কাজে লাগাতে পারে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবশিস কুমার বলেন, ‘‘ওই মেশিনগুলি দিয়ে গাছে স্প্রে কী ভাবে করা সম্ভব, তা দেখা হবে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, করোনার সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতর ও পুরসভার স্টোর বিভাগ মিলিয়ে ১৮০টি আধুনিক প্রযুক্তির স্প্রে মেশিন কিনেছিল। মোট ৩৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খরচে কেনা এই যন্ত্রগুলি এখন পড়ে রয়েছে প্রতিটি বরো অফিসে। পুরসভার কঠিন বর্জ্য অপসারণ দফতরের পাশাপাশি এন্টালির স্টোর বিভাগ ওই যন্ত্রগুলি কিনেছিল।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এ ভাবে মেশিনগুলি বছরের পর বছর পড়ে থাকলে এর পরে আর কাজ করবে না। বরং পুরসভার অন্যান্য দফতর মেশিনগুলি যাতে শীঘ্রই কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুক।’’ পুরসভার বিজেপি পুর প্রতিনিধি সজল ঘোষ বলছেন, ‘‘মানুষের করের টাকায় মেশিনগুলি কেনা হয়েছিল। এখন শহরে ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর এই মেশিনগুলি কাজে লাগাতে পারে। তা হলে মশার লার্ভা ধ্বংস হয়, সাধারণ মানুষও উপকৃত হন।’’ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কারণ, স্প্রে করার বিষয়ে পতঙ্গবিদদের দেওয়া নির্দেশিকা মেনেই কাজ করতে হয়।’’
কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মশার লার্ভা ধ্বংস করতে সব ওয়ার্ডে ন্যাপস্যাক স্প্রে মেশিন রয়েছে। কোভিডের সময়ে কী মেশিন কেনা হয়েছিল, জানা নেই। তবে মশার লার্ভা ধ্বংস করতে কাজে লাগে ন্যাপস্যাক স্প্রে মেশিন। যা বিজ্ঞানসম্মত বিধি মেনেই তৈরি। স্যানিটাইজেশন মেশিন দিয়ে লার্ভা মারার কাজ ভাল ভাবে হবে না। তবে এই মেশিনের মাধ্যমে গাছে স্প্রে করা যায় কি না, তা দেখা যেতে পারে।’’
কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন উদ্যানবিদ সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শহরের দূষণে গাছের পাতায় ধুলো পড়ে। যার জন্য গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। গাছের পাতা ধুয়ে দেওয়া কিংবা পোকা মারার ওষুধ প্রয়োগ করতে এই স্প্রে মেশিন কাজে লাগানো যেতেই পারে।’’