ফাইল চিত্র।
বাজি বিক্রি ও পোড়ানো বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পরিবেশকর্মীদের। এমনকি, শেষবেলায় বাজি আটকানো নিয়ে ধন্দে পুলিশের নিচুতলার একাংশও! কারণ, দুর্গাপুজোর সময় থেকেই বাজি বিক্রি শুরু হয়েছে। শহরতলি, জেলার বিভিন্ন পাড়ায়-পাড়ায় অস্থায়ী দোকান গজিয়ে উঠেছে। জনগণ বাজি কিনে ফেললে হাজারো পাহারা দিয়েও পুরোপুরি বন্ধ করা মুস্কিল। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা না করে প্রশাসন আগে থেকে সক্রিয় হলে এই আশঙ্কা থাকত না।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার তথা পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, বাজি বন্ধের আর্জি জানিয়ে তিনি এ বছর মার্চ মাসেই প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন। তার পরে আরও একটি চিঠি দেন। কিন্তু তাতে প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট প্রত্যুত্তর মেলেনি। সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশের পরে টনক নড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সব থানাকে নিজ নিজ এলাকায় বাজির বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে মন্তব্যে নারাজ পুলিশকর্তারা। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ প্রতি বছর প্রচুর বেআইনি বাজি ধরে। এ বার ধরপাকড় হলেও তার পরিমাণ আহামরি নয়। তাই নির্দেশপালন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তারা।
পুলিশের একাংশ বলছেন, গত দু’বছর পরোক্ষ রাজনৈতিক মদতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো হয়েছে। বাজি শিল্পের কোনও কোনও নেতাও রাজনৈতিক মদতপুষ্ট। ফলে ইচ্ছে থাকলেও বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে পুরোপুরি অভিযান চালাতে পারে না প্রশাসন। তাই বহু বছর আগে শব্দবাজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তার দাপট বন্ধ হয়নি। প্রতি বছরই শেষ বেলায় টনক নড়ে। তাতেই যেটুকু কড়াকড়ি হয়।
আরও পডুন: আগামী ৩ বছরে রাজ্যে ৩৫ লক্ষ কাজের ঘোষণা মমতার
আরও পডুন: গৃহশিক্ষকতা: মুচলেকার নির্দেশ উত্তর ২৪ পরগনায়
পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, এ রাজ্যে বর্তমানে ৩১টি বাজির কারখানার লাইসেন্স রয়েছে। বাকি কারখানাগুলি অনুমতি ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে। কয়েক জন অসাধু ব্যবসায়ী লক্ষ-লক্ষ শ্রমিকের দুর্দশার কথা জানিয়ে বেআইনি বাজি কারখানার প্রতি সহানুভূতি আদায়ে সচেষ্ট থাকেন। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ না হলে এই উপদ্রব কমবে না।
পুলিশকর্তারাও বলছেন, বাজি বন্ধ রাখতে হলে জনতার সচেতনতাও প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশের আগে রাজ্য সরকারও বাজি পোড়ানো বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিল। তবে বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, ‘‘শুভবুদ্ধির কাছে আর্জি জানিয়েই কাজ হয়ে গেলে দেশে আইন তৈরির প্রয়োজন হত না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাজি শিল্পের লক্ষ-লক্ষ শ্রমিকের দুর্ভোগের কথা যাঁরা শোনান বাজি শ্রমিকদের প্রভিডেন্ড ফান্ড, ইএসআই কিংবা পুড়ে গেলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে তাঁদের তৎপরতা তো চোখে পড়ে না!’’