প্রতীকী ছবি।
গুরুতর অসুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যভবনের কাছে স্বেচ্ছা অবসরের আর্জি জানিয়েছিলেন এক সরকারি চক্ষু চিকিৎসক। অভিযোগ, দীর্ঘদিন টালবাহানার পরেও তা মেলেনি। শেষে এসএসকেএম ও ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’-র বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাঞ্চন মণ্ডল (৫৪) নামে ওই চিকিৎসকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায় স্বাস্থ্য ভবন। সেই রিপোর্ট জমা পড়ার দিনেই মৃত্যু হল ওই চিকিৎসকের।
স্বাস্থ্য দফতরের ‘অবসর নীতি’র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কর্মক্ষমতা না-থাকলেও জোর করে চাকরিতে আটকে রাখা হচ্ছে। কাঞ্চনবাবুর মৃত্যু সেই অভিযোগকেই জোরালো করেছে। অসুস্থ চিকিৎসকদের অবসর মঞ্জুর করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের টালবাহনা নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি।
গত ২৩ এপ্রিল ক্যান্সার-আক্রান্ত মনোরোগ চিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের অবসর নীতি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। চিকিৎসক সংগঠনগুলির অভিযোগ ছিল, স্বাস্থ্যভবন গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড গৌতমবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি চাকরিতে বহাল থাকার উপযোগী নয় বলে জানানোর পরেও তাঁর স্বেচ্ছা অবসরের আর্জি মঞ্জুর হয়নি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে বাম প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’ (এএইচএসডি) যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল সেখানে চক্ষু চিকিৎসক কাঞ্চনবাবুর কথাও লেখা ছিল বলে সূত্রের খবর।
শনিবার এএইচএসডি’র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানান, স্নায়ুরোগে আক্রান্ত কাঞ্চনবাবু ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’তে (বিআইএন) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাঞ্চনবাবুর প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। পরে তাঁকে বাঙ্গুরে আনা হয়। বেসরকারি হাসপাতালে তিনি যখন কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন, তখন তাঁকে এনআরএস হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ডে হাজির হতে বলা হয়।’’ গত ১১মে স্বাস্থ্যভবনের কাছে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। এর দিন দশেক পরে বিআইএন এবং এসএসকেএমের চিকিৎসকদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। মানসবাবু জানান, বৃহস্পতিবার কাঞ্চনবাবুকে পরীক্ষা করে শুক্রবার রিপোর্ট দেয় মেডিক্যাল বোর্ড। ওই দিনই বিআইএন-এর চিকিৎসকেরা কাঞ্চনবাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।
মানসবাবু বলেন, ‘‘অমানবিকতার নয়া নজির তৈরি করল স্বাস্থ্য দফতর। এ নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন হবে।’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরে যে নৈরাজ্য ও স্বৈরতন্ত্র চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বেচ্ছাবসর না পাওয়ায় যে চিকিৎসকদের অকাল মৃত্যু হল, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’’ তৃণমূল প্রভাবিত প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস ইউনিয়নের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে যাঁরা অসুস্থ, তাঁদের স্বেচ্ছা অবসরের আর্জি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’’