Duare sarkar

লাগতে পারে ২৫০ কোটি, মন বুঝতেই কি ভোটের মুখে দুয়ারে সরকার

পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতি ও পরের পর গ্রেফতারি ভোটের আগে শাসক দল এবং রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে রেখেছে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৪
Share:

এপ্রিলে ২০ দিনের কর্মসূচিতে খরচের সম্ভাবনা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ফাইল চিত্র।

বাংলার পঞ্চায়েত ভোট যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, সেই সময়েই নতুন করে ‘দুয়ারে সরকার’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ও জল্পনা চলছে যুগপৎ। প্রশাসনিক সূত্রের হিসেবে এপ্রিলে ২০ দিনের ওই কর্মসূচিতে খরচের সম্ভাবনা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা! ভোটের আগে ভাবমূর্তি ফেরাতে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও মাস তিনেকের ব্যবধানে ফের এই ‘খরচসাপেক্ষ’ পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক। তাঁদের অনেকের পর্যবেক্ষণ, ভোটের আগে মানুষের মন বুঝতে এই ধরনের শিবির খুবই সহায়ক হতে পারে।

Advertisement

পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতি ও পরের পর গ্রেফতারি ভোটের আগে শাসক দল এবং রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে রেখেছে। গ্রামীণ এলাকায় সব চেয়ে বড় ভোট হয়ে থাকে পঞ্চায়েত স্তরেই। এই অবস্থায় মানুষের মনে ওই সব ঘটনার নেতিবাচক ছাপ থাকুক, তা চাইছে না সরকার। তাই প্রশাসনিক পদক্ষেপ করতে হচ্ছে সমান্তরালে। মানুষের পরিষেবার চাহিদা মেটানো গেলে বিরূপতার আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আধিকারিকদের আশা।

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, “হয়তো বিভিন্ন ভাবে মানুষের আরও চাহিদা উঠে এসেছে বলেই দুয়ারে সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচি চলছে। এ বার সবই করা হচ্ছে আরও নিবিড় ভাবে। তাতে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও পরিষেবা পৌঁছে যাবে।”

Advertisement

গত ১ নভেম্বর রাজ্যে পঞ্চম দফার দুয়ারে সরকার শুরু হয়েছিল। দু’দফায় মেয়াদ বেড়ে তা চলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফের ১ থেকে ২০ এপ্রিল ওই কর্মসূচি নিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার বলে দেওয়া হয়েছে, দুয়ারে সরকারের শিবির করতে হবে বুথ এলাকায়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হিসেবে বঙ্গে বুথের সংখ্যা ৬১,৩৪০। আর এ-পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৮২ হাজার শিবিরের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, দুয়ারে সরকারের শিবিরে মণ্ডপ তৈরি, টেবিল-চেয়ার ভাড়া, শিবির চালানোর লোকবল, তাঁদের খাওয়াদাওয়া, কম্পিউটার-প্রিন্টার, গাড়ি, প্রচার ইত্যাদি খাতে খরচ থাকেই। লক্ষ লক্ষ তথ্য নথিবদ্ধ করার জন্য টাকা দিতে হয় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের। সব মিলিয়ে প্রতিটি বড় শিবিরের খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন বুথ-ভিত্তিক ব্যবস্থা করতে হলে শিবিরের সংখ্যা বাড়বে। ছোট পরিসরে শিবির হলে শিবির-পিছু ২০ হাজার টাকা ধরলেও খরচ ২০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। শিবির-পিছু খরচ যত বেশি হবে, তত বাড়বে মোট খরচ।

দুয়ারে সরকারের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ১ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পরিষেবার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। ১১-২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে পরিষেবা প্রদান। সব সম্পূর্ণ করতে হবে ২০ এপ্রিলের মধ্যে। এক জেলা-কর্তা বলেন, ‘‘শিবিরে মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই দিকে নজর রাখতে হয়। ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রাখা চলে না। সব মিলিয়ে পরিষেবা প্রদানের খরচ খুব কম নয়।’’

রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত দুয়ারে সরকার কর্মসূচি (পাঁচ দফা) পর্যন্ত প্রায় ৩.৭১ লক্ষ শিবির হয়েছিল। প্রায় ৬.৭৭ কোটি পরিষেবা দেওয়া হয়। শিবিরে নাম নথিবদ্ধ করিয়েছিলেন অন্তত ৮.৯৬ কোটি মানুষ।

তবে প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মানুষ যে-পরিষেবা পেয়েছেন, তার সঙ্গে খরচটা কখনওই তুলনীয় নয়। কারণ, বাড়ির কাছে প্রশাসন পৌঁছে যাওয়ায় মানুষকে পরিশ্রম এবং যাতায়াতে অর্থ খরচ করে সরকারি অফিসে যেতে হয়নি। তা ছাড়া প্রথম দুয়ারে সরকার ছাড়া পরের চারটিতে শিবিরের সংখ্যা আরও বেশি ছিল। তাই রাজনৈতিক নয়, বরং মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement