অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের ছেলেমেয়েরা মাস্ক পরে নানা কাজে বাইরে যে বেরোয় না তা নয়। ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পরে স্কুল যে অবিলম্বে খোলা দরকার, সেই বিষয়ে দ্বিমত নেই বললেই চলে। কিন্তু স্কুল শুরুর সময় এবং শুরুতেই স্কুলের সময়সীমা ছ’ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত পড়েছে প্রশ্নের মুখে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশের প্রশ্ন, স্কুল খোলার পরেই নবম থেকে দ্বাদশ এই চারটি শ্রেণির পড়ুয়ারা টানা ছ’ঘণ্টা মাস্ক পরে ক্লাসে থাকবে কী ভাবে? তাঁদের দাবি, স্কুলে থাকার সময় এখনই ছ’ঘণ্টা না-করে ধাপে ধাপে সেটা বাড়ানো হোক। যে-সব শিক্ষক ও পড়ুয়ারা দূর থেকে আসেন, তাঁদের সকলেই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে পারবেন কি না, সংশয় আছে সেই বিষয়েও। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, সাড়ে ৯টা নয়, আগেকার নিয়ম অনুযায়ী স্কুল শুরু করা হোক পৌনে ১১টাতেই।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ নভেম্বর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে নবম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। তবে তাদের স্কুলে পৌঁছে যেতে হবে সাড়ে ৯টার মধ্যে। ছুটি হবে বেলা সাড়ে ৩টেয়। দশম ও দ্বাদশের ক্লাস শুরু হবে বেলা ১১টায়। তাদের স্কুলে পৌঁছতে হবে সাড়ে ১০টার মধ্যে। ছুটি হবে বিকেল সাড়ে ৪টেয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সকাল ৯টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে বলা হয়েছে।
অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের ছেলেমেয়েরা মাস্ক পরে নানা কাজে বাইরে যে বেরোয় না তা নয়। কিন্তু বেরোলেও সেটা কিছু সময়ের জন্য। স্কুল চালু হয়ে গেলে টানা ছ’ঘণ্টা মাস্ক পরে ক্লাসে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ঘনঘন স্যানিটাইজ়েশন বা জীবাণুনাশ এবং হাত ধোয়ার কাজও চলবে। স্কুলের নির্দেশাবলিতেই এটা বলা হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশের পনেরো থেকে সতেরো বছরের ছেলেমেয়েদের পক্ষে টানা ছ’-সাত ঘণ্টা মাস্ক পরে থাকা কি সম্ভব, প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা। শিয়ালদহের টাকি বয়েজ স্কুলের কয়েক জন অভিভাবক জানান, মাস্ক কিছু ক্ষণ খুলে রাখাও তো বিপদ। আবার টানা পরে থাকাও রীতিমতো সমস্যার। পড়ুয়ারা তা হলে কী করবে? অভিভাবকদের একাংশের আশঙ্কা, বাস্তবে হয়তো দেখা যাবে, টানা মাস্ক পরে থাকতে না-পারায় অনেকের মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে। তাতে তো মাস্ক পরার লক্ষ্য পূরণ হতে পারে না।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে আমরা স্কুলের সময়সীমা প্রথমেই ছ’ঘণ্টা না-করে ধাপে ধাপে বাড়ানোর কথা বলছি। প্রথমে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ক্লাস করে পড়ুয়ারা দীর্ঘ ক্ষণ মাস্ক পরে থাকাটা রপ্ত করে নিক। নিয়মিত হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ়েশনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে স্কুলের সময়সীমা বাড়ানো হোক।”
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সড়ে ৯টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে হলে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে অনেক সকালে। গ্রামাঞ্চলে পরিবহণের সমস্যা থাকায় অনেকে সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে পারবে কি না সন্দেহ। তাই তাঁরা চাইছেন, পুরনো নিয়ম অনুযায়ী স্কুল শুরু হোক ১০টা ৪৫ মিনিটেই। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকার বলেন, “সময় বিভাজন না-করে নবম থেকে দ্বাদশ চার শ্রেণির পড়ুয়াদেরই স্কুলে পৌঁছনোর সময় সাড়ে ১০টা করা হোক। তা হলে স্কুলে পৌঁছনোর জন্য সকলেই পর্যাপ্ত সময় পাবে।’’ নবকুমারবাবুর বক্তব্য, নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সাড়ে ৯টায় স্কুলে পৌঁছতে হলে তাদের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে চলে আসতে হবে সকাল ৯টায়। স্কুলের ফটকে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ়েশন, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে তাঁদেরই। কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা অত সকালে সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে না-পারলে গেটে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের হাত স্যানিটাইজ়েশন এবং তাপমাত্রা পরীক্ষার কাজও ব্যাহত হতে পারে। সেটা বাঞ্ছনীয় নয় মোটেই।