অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।
প্রতীচী বাড়ির জমির মিউটেশন নিয়ে বোলপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে শুনানি চলছে। এখনও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। এমন আবহে অমর্ত্য সেনকে কেন ‘জমি দখল’ করার অভিযোগ তুলে ‘দখলদার উচ্ছেদ আইন’ প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দিল বিশ্বভারতী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। জমি-বিতর্কের মীমাংসা হওয়ার আগেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এ হেন আচরণে আশ্রমিক ও বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একাংশ ক্ষুব্ধও।
এখনও তাঁরা নোটিস হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন অমর্ত্যের আইনজীবী। তবে, ‘প্রতীচী’র ঠিকানায় পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৪ মার্চ বা তার আগে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কেন অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে উচ্ছেদ আইন প্রয়োগ করা হবে না! কারণ তিনি ‘অন্যায় ভাবে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডেসিমেল (শতক) জায়গা ‘দখল’ করে আছেন। চিঠিতে ২৯ মার্চ বিকেলে অমর্ত্যকে সশরীর অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম কর্মসচিব তথা এস্টেট অফিসারের (যাঁর সই রয়েছে নোটিসে) সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। সেখানেই ওই ‘বিতর্কিত’ জমি নিয়ে শুনানি হবে।
গত কয়েক মাস ধরেই অমর্ত্য সেন ও বিশ্বভারতীর মধ্যে ওই ১৩ শতক জমি নিয়ে টানাপড়েন চলছে। প্রতীচীর জমি মিউটেশনের জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে দু’পক্ষ হাজির হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। এরই মাঝে বিশ্বভারতীর তরফে তিন পাতার নোটিস পাঠিয়ে ফের নোবেলজয়ীকে আক্রমণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই নোটিসে দাবি করা হয়েছে, ১.২৫ একর জমি ১৯৪৩ সালে ৯৯ বছরের জন্য অমর্ত্যের পিতা আশুতোষ সেনকে লিজ় দেওয়া হয়েছিল। বাকি ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্যের নয়। কারণ, এর আগে তিনি মিউটেশনের জন্য যে আবেদন করেছিলেন তাতে ১.২৫ একরের কথাই বলেছিলেন। ‘আইন মেনে’ তিনি ১.২৫ একর জমি রাখতে পারেন বলেও নোটিসে বলা হয়েছে।
অমর্ত্যের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, “আমি এখনও কোনও নোটিস হাতে পাইনি। স্যর দেশের বাইরে রয়েছেন। তাই ওঁর নির্দেশ না-পাওয়া পর্যন্ত আমি কোনও পদক্ষেপ করতে পারব না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আশুতোষ সেনের সময়ে যে জমি লিজ় নেওয়া হয়েছিল, সেখানেই অমর্ত্য সেন আছেন বাল্যকাল থেকে। তিনি নিজে কোনও জমি দখল করেননি।” বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা আশ্রমিক স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। কিন্তু, অমর্ত্য সেনের মতো আশ্রমিকের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের এই ধরনের আচরণে আমরা সবাই হতবাক ও মর্মাহত।”
মিউটেশনের নিষ্পত্তির আগেই কেন চিঠি, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এ দিন সংবাদমাধ্যমের একাংশকে বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলাম। যার জন্য উনি (অমর্ত্য সেন) যখন এখানে ছিলেন তখন নোটিস দিয়েছিলাম। আমি মনে করেছি, যে জমি কব্জা করে রেখেছেন অধ্যাপক সেন, তা বিশ্বভারতীতে ফিরিয়ে আনতে হবে।’’