কুয়াশা নয়। ধুলোয় ঢেকেছে ভাঙাচোরা রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম সড়ক। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
বেহাল জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে দিন কয়েক আগেই অবরোধ করেছিল দুবরাজপুর সাতকেন্দুরী ব্যবসায়ী সমিতি। আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। ফের একই দাবিতে বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সাতকেন্দুরী মোড় অবরোধ করল ব্যবসায়ী সমিতি।
তবে তফাত্ শুধু একটাই। গতবার দলীয় পতাকা সঙ্গে ছিল না। এ বার আন্দোলন হল তৃণমূলের পতাকা নিয়েই। স্কুল ও অফিস টাইমে সকাল ৯টা থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় পথ অবরোধের ফলে ওই মোড়ের দুই দিকে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। অবরোধকারী ব্যবসায়ীরা অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবতে রাজি হননি। তাঁদের ক্ষোভ, নামেই জাতীয় সড়ক। অনেক আগেই পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে ভরে গিয়েছে ওই রাস্তা। এখন রাস্তায় যান চলাচল করলে ধূলোয় ঢেকে যায় চারদিক। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গত তিন বছর ধরে একই অবস্থা। ব্যবসা মার খাচ্ছে এখানকার শাতাধিক ব্যবসায়ীর। দিন কয়েক আগে রাস্তা সারানোর দাবিতে যখন পথ অবরোধ করেছিলেন, তখনই বলা হয়ছিল অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার না করলে ফের পথে নামা হবে। প্রশাসন কথা না রাখায় তাঁরা ফের অবরোধ করেন। এ দিন তাঁরা দাবি করেন, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এখানে এসে প্রতিশ্রুতি না দিলে অবরোধ উঠবে না। শেষ পর্যন্ত দুপুর ১২টা নাগাদ ওই জাতীয় সড়কের দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র আর.কে সিংহ আসেন। তিনি আশ্বাস দেন, এখন আপাতত রাস্তা জল দিয়ে ভিজিয়ে ধুলো ওড়া আটকানোর চেষ্টা হবে। মাস খানেকের মধ্যে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এই প্রতিশ্রুতির পর অবরোধ ওঠে।
৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে
সাতকেন্দুরীতে তৃণমূলের ব্যানারে অবরোধ।
ঘন্টা তিনেকেরও বেশি অবরোধের জেরে দাঁড়িয়ে পড়া সার সার লরি, বেসরকারি ও সরকারি বাস, ছোট চার চাকা-সহ নানা যানবাহনের আরোহী বা যাত্রীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। কেউ কেউ কতক্ষণে বাস থেকে নেমে কষ্ট করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যে অবরোধ করা হবে তা আগেই ঠিক হয়েছিল। অবরোধে সামিল ব্যবসায়ী সনাতন পাল, হাসিব চৌধুরী, ভক্তদাস পাল, পবন অগ্রবাল, তাপস চৌধুরীরা জানান, এই জাতীয় সড়কটির রনিগঞ্জ থেকে দুবরাজপুর পর্যন্ত রাস্তার হাল ভাল থাকলেও দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় থেকেই বেহাল অবস্থা শুরু হয়েছে। এই সড়কের যে যে অংশগুলি সবচেয়ে খারাপ দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড় সেগুলির অন্যতম। তাঁদের ক্ষোভ, “সাতকেন্দুরীতে শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। মূলত হোটেল, ধাবা, গাড়ি সারানোর যন্ত্রপাতির দোকান, গ্যারাজ, পেট্রোল পাম্প রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই বেহাল হয়ে রয়েছে এই সড়ক। বর্ষায় জল জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। দায় সারা ভাবে কোনও বার পাথর ও পাথরগুঁড়ো গর্তে ফেলে তা ভারাট করে দেয়। কিন্তু মাস খানেক যেতে না যেতেই পুরনো চেহারায় ফিরে আসে রাস্তার। যে ভাবে ধূলো উড়তে থাকে, তাতে বাতাস দূষিত হওয়ার পাশাপাশি হোটেলের খাবারে পড়ছে। অস্থির হয়ে পড়ছেন এই রাস্তায় চালাচলকরি মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। ধূলো এড়িয়ে কেউ এখানে দাঁড়াতেই চাইছেন না।”
তাঁরা আরও বলেন, “শুধু তাই নয়। রাস্তার একপাশে ৯ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। রয়েছে প্রচুর শিশুও। ধুলোর জেরে তাদের অবস্থাও করুণ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদের এই রাস্তা নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।” নিজেদের সব ব্যবসা বন্ধ করে এ দিন অবরোদে সামিল হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার উপর তৃণমূলের ছত্র ছায়ায় পথ অবরোধ করায় সেটা আরও জোরাল হয়। পরিস্থিতি নজরে রাখতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসেন দুবরাজপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে, উপ-পুরপ্রধান মির্জা সৌকত আলি। আন্দোলনকে সমর্থন করে পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “দিন কয়েক আগে জেলাশাসক ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে অবস্থার কাথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছিলেন রাস্তা সংস্কারে দরপত্র ডাকা হয়েছে। কাজের বরাত পেয়েছেন এক ঠিকাদার। কিন্তু এই অংশে কখন কাজ হবে তার নির্দিষ্ট সময় বলতে না পারায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হন। অনেক আগেই রাস্তা সারানোর বিষয়টি ভাবা উচিত্ ছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের।” জাতীয় সড়কের ওই আধিকারিক আর.কে সিংহ আসার পর পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের উপস্থিতে অবরোধে সামিল ব্যবসায়ীদের মধ্যে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। আর.কে সিংহ বলেন, “যে ঠিকাদার সংস্থা এই রাস্তা সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে তাদের যন্ত্রপাতি এখানে নিয়ে এসে কাজ শুরু করতে কিছু সময় লাগে। সেটা হয়ে গেলেই কাজ শুরু হবে। তবে বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে আমরা চেষ্টা করছি যেন জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করানো যায়।”