—প্রতীকী চিত্র।
তিন বছর আগে ছিল পরিবর্তনের সম্মেলন। দলের কমিটিতে তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোলেও এ বারের সম্মেলন-পর্বে জেলায় জেলায় সিপিএমের নেতৃত্বে তেমন ঢালাও রদবদলের সম্ভাবনা কম। সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই হাফ ডজ়ন জেলায় এ বার নতুন সম্পাদক বেছে নিতে হবে সিপিএমকে। তবে তার বাইরে বড় কোনও পরিবর্তনের ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই। কমিটির গড় বয়স যথাসম্ভব কমিয়ে আনার লক্ষ্য অবশ্য বজায় রাখতে বলা হয়েছে দলের সব জেলা নেতৃত্বকেই।
সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, টানা তিন দফার বেশি কোনও কমিটির সম্পাদক পদে থাকা যায় না। আবার জেলা সম্পাদকের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা আছে ৭০ বছরে। সাংগঠনিক এই নিয়ম-নীতি কার্যকর হওয়ার পরে ২০২২ সালের সম্মেলনে বেশ কিছু জেলায় সম্পাদক বদল হয়েছিল। তার ফলে, সেই জেলাগুলির ক্ষেত্রে এখনই পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ছে না। বাঁধা নিয়মের বাইরে অন্যান্য কারণে অবশ্য কিছু পরিবর্তন হতে চলেছে বলে সিপিএম সূত্রে ইঙ্গিত।
রাজ্য জুড়ে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্মেলন শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পরে আসছে জেলা সম্মেলনের পর্ব। যে সূচি ঠিক হয়েছে, সেই অনুযায়ী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জেলা সম্মেলন শুরু হবে নদিয়াকে দিয়ে। এবং সেই জেলা সম্মেলনেই নেতৃত্ব বদল হবে। দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে এখন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সিপিএমে একসঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। সেই কারণে এই বদল অনিবার্যই ছিল। এত দিন না-করে সেই প্রক্রিয়া সম্মেলনেই সম্পন্ন করতে চায় সিপিএম। নদিয়ার পরেই হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলির জেলা সম্মেলন। নদিয়ার মতো একই কারণে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকও বদল করতে হত। দলীয় মুখপত্রের সম্পাদকের ভার নেওয়ার পরে শমীক লাহিড়ী জেলা সম্পাদকের সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন কয়েক মাস আগে। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সম্পাদকের হাতেই জেলার ভার রাখতে চাইছে দল।
দলীয় সূত্রের খবর, বয়স এবং তিন দফায় পদে থাকার নিয়মের জেরে নেতৃত্বের মুখ বদল হতে পারে কোচবিহার ও মালদহে। উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস প্রয়াত হওয়ায় সেখানে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রেখে কাজ চলছে। ওই জেলায় এখন পূর্ণাঙ্গ সম্পাদক বেছে নেওয়ার কথা। জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারিতে সম্মেলন হবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। সিপিএম সূত্রে ইঙ্গিত, দুই মেদিনীপুরেই এ বার নতুন সম্পাদক নির্বাচন হতে চলেছে। পূর্বে নিরঞ্জন সিহির তিন দফায় জেলা সম্পাদক থাকা হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমে সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ওঠায় তাঁকে ছুটিতে পাঠিয়ে দলীয় তদন্ত চলছে। তাঁর জায়গায় পাকাপাকি পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে দলে। এর বাইরে দু-একটি জেলায় নেতৃত্ব বদলের দাবি দলের একাংশে উঠলেও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তাকে খুব ‘মান্যতা’ দেবে, এমন ইঙ্গিত নেই এখনও।
কমিটি গড়ার সময়ে বিভিন্ন বয়স এবং অংশের প্রতিনিধিত্ব ঠিক রাখার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে সম্মেলনের নির্দেশিকায়। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘গত বারই কমিটির গড় বয়স অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। জেলা থেকে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশির ভাগ জায়গায় গড় বয়স পঞ্চাশের নীচেই আছে। এমনকি, গড় বয়স ৪২, এমন জেলাও আছে। ফলে, সাযুজ্য রেখেই গোটা প্রক্রিয়া হবে।’’