হামলার পরে যামিনী রায় কলেজের সামনে মোতায়েন পুলিশ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
ভর্তির ফর্ম জমা দিতে আসা পড়ুয়া-অভিভাবকদের লাইনের দিকে অস্ত্র উঁচিয়ে তেড়ে গেল এক দল লোক। শুক্রবার বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের যামিনী রায় কলেজে তুলকালাম বাধায় ওই বহিরাগতেরা। কলেজের ছাত্র সংসদের দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বেই এই ঘটনা বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে এলাকার তৃণমূল নেতারা।
মিনিট দশেক ধরে কলেজ চত্বরে দাপিয়ে গাড়িতে চেপে বেরিয়ে যায় বহিরাগতেরা। পিছু নিয়েও তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মেলে। জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “গাড়ির ভিতর থেকে লোহার রড এবং হাঁসুয়া মিলেছে। মালিকের খোঁজ চলছে।”
কলেজে ফর্ম জমা দিতে আসা পড়ুয়াদের বক্তব্য, “বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গাড়ি থেকে নেমে আট-দশটা লোক ‘মার-মার’ বলে তেড়ে এল। ওদের তাড়ায় পড়ে গিয়ে অনেকে চোটও পান।” কলেজের টিচার-ইন-চার্জ প্রকাশকান্তি নায়েক জানান, বিষয়টি থানায় জানিয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেলিয়াতোড়ের এই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ১২টি আসনের সব ক’টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। তৃণমূল-অন্দরের খবর, ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে তৃণমূল যুবার স্থানীয় নেতা রাজীব ঘোষাল ঘনিষ্ঠ ছ’জন এবং বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি (তৃণমূল সদস্য) তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য কালীদাস মুখোপাধ্যায়ের ছয় অনুগামী জেতেন। দু’পক্ষের বিবাদের জেরে এখনও কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হননি। এ দিন তাদেরই এক পক্ষ নিজেদের শক্তি দেখাতে কলেজে চড়াও হয়েছিল বলে কলেজ-পড়ুয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মনে করছেন।
কালীদাস এবং রাজীবঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ। কালীদাসবাবুর বক্তব্য, “দলে এমন কিছু লোক ঢুকেছে, যারা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি-আদর্শকে মানে না। তারাই কলেজের পরিবেশ নষ্ট করছে।” রাজীববাবুর মন্তব্য, “তৃণমূলের পোশাকে কিছু অ-তৃণমূলী দলকে বদনাম করতে সব সময় তৈরি।” তবে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে। ঘটনাটা রাজ্য নেতৃত্বকে জানাবো। জড়িতদের দলীয় ভাবে শাস্তি দিতেও সুপারিশ করবো।”