কানে মন্ত্রীর মোবাইল। অন্য প্রান্তে মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলছেন মৃতের দিদি লতা সোরেন।— নিজস্ব চিত্র।
নির্যাতনের অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। কিন্তু, পুলিশ হেফাজতে আনাড়া রেল কলোনির যুবক এরিক সোরেনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লোজ করে সাসপেন্ড করা হয়েছে দুই পুলিশ অফিসারকে। এ বার মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও মৃতের এক বোনকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। শুক্রবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশি নির্যাতনেই এরিকের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে পুরুলিয়ার এসপি-র কাছে অভিযোগ করেছেন এরিকের বাবা, রেলকর্মী এস এল সোরেন। ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দিয়ে সরকার কি প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছে পুলিশের অত্যাচারের কথা? মানতে চাননি পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, “বিচার বিভাগীয় তদন্তে স্পষ্ট হবে, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যে হেতু পুলিশের হেফাজতে ওই যুবক মারা গিয়েছেন, তাই মানবিকতার খাতিরে মুখ্যমন্ত্রী আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এরিককে চুরিতে জড়িত সন্দেহে ধরেছিল পাড়া থানার পুলিশ। বুধবার ভোরে পুলিশ মৃত অবস্থায় ওই যুবককে নিয়ে যায় হাসপাতালে। বুধবার পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। চাপে পড়ে আনাড়া ফাঁড়ি ও পাড়া থানার ওসি-কে ক্লোজ করে সাসপেন্ড করা হয়।
দুপুরে পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো, মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু, পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরিকে নিয়ে এরিকের বাড়ি যান শান্তিরামবাবু। এরিকের পরিবার চাকরি, ক্ষতিপূরণের দাবি করে। মিনিট পনেরো কাটিয়ে মন্ত্রী পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে ফিরে মুখ্যমন্ত্রীকে পরিবারের দাবির কথা জানান। শুনে এরিকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। শান্তিরামবাবু ফের এরিকের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। মন্ত্রীর ফোনেই মৃতের দিদি লতা সোরেনের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। লতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী ঘটনা ও আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে কিনা, জানতে চান। তাঁকে বলেছি বাবা রেলে চাকরি করলেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বেশি দিন কাজ করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
শান্তিরামবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পরিবারের এক জনের বায়োডেটা মুখ্যসচিবকে দিতে বলেছেন। এরিকের দিদি লিলি সোরেনের বায়োডেটা নিয়েছি। মুখ্যসচিবের কাছে পাঠিয়ে দেব।” এ দিনই রঘুনাথপুর আদালতের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সংগ্রাম সাহা আনাড়ায় গিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।