পঞ্চায়েতের প্রধান আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত, এই অভিযোগ তুলে দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন তৃণমূল সদস্যেরা। সোমবারই ব্লক প্রশাসনের কাছে উপপ্রধান-সহ তৃণমূলেরই আরও ছয় সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও জমা করলেন। দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা। দুবারজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের কয়েক জন সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”
অনাস্থা প্রস্তাব আনা সদস্যদের দাবি, দলীয় নেতৃত্বের কাছে দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও প্রধানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শেষমেশ তাই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। দেড় বছরের মধ্যেই ঘরের কোন্দল এ ভাবে প্রকাশ্য চলে আসায় প্রবল অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। সরাসরি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি নেতারা। দলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র কেবল বলেন, “কেন অনাস্থা আনা হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।” যদিও দলেরই একটি সূত্রের খবর, কীভাবে দলের ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ পঞ্চায়েত সদস্যদের বুঝিয়ে শেষ অবধি ‘বিদ্রোহ’ রোখা যায়, ইতিমধ্যেই তার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিষয়টি যাতে ভোটাভুটি পর্যন্ত না যায়, তার জন্য দলের তরফেই প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে, গত পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট পাননি এমন স্থানীয় কিছু নেতা পঞ্চায়েতের ওই সদস্যদের মদত দিচ্ছেন বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা এগারো। গত পঞ্চায়েত ভোটে মোট ৯টি আসন জিতে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। দু’টি আসন পায় সিপিএম। প্রধান হন তৃণমূলের শিবঠাকুর মণ্ডল। যিনি রাজনৈতিক মহলে দলের ব্লক সভাপতির কাছের লোক বলেই পরিচিত। কিন্তু, গত কয়েক মাস ধরেই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রধানের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় দলেরই অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যদের। পঞ্চায়েতের কাজের হিসেব চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে কয়েকটি আরটিআই-ও হয়। কিছু দিন আগে নিখিল বাউড়ি নামে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের মৃত্যর পরেই প্রধানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। এ দিন অনাস্থায় সই করা তৃণমূল সদস্য তোফা বাদ্যকর, আশিস বাগদি, সুনীল বাগদি, জামাল খান, কল্পনা দাসদের অভিযোগ, “প্রধান আমাদের কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই বিভিন্ন বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের কার্যত পাত্তাই দেন না। পঞ্চায়েতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তিনি আর্থিক নয়ছয় করে চলেছেন। বহু বার এ নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি।” এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তির উঠেছে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি হান্নান খানের বিরুদ্ধেও।
যদিও কোনও অভিযোগই মানতে চাননি প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল। তাঁর পাল্টা দাবি, “বিভিন্ন কাজে দলেরই কিছু নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য অন্যায় ভাবে টাকাপয়সা দাবি করে থাকেন। এই অন্যায় কাজে রাজি না হওয়াতেই তাঁরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন।” শিবঠাকুরবাবুর আরও দাবি, সম্প্রতি মঙ্গলপুর গ্রামে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরিতে এবং একটি পুকুর সংস্কারের কাজেও বেনিয়ম করে টাকা পয়সা তুলে নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের ওই সদস্যেরা তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি বিলে সই করেননি। প্রধানের বক্তব্য, “আমি ওঁদের অন্যায় দাবি শুনব না। তাতে যদি পদ ছাড়তে হয়, ছেড়ে দেব।” প্রধানের এই দাবিকে অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অনাস্থা প্রস্তাব আনা সদস্যেরা। তাঁরা বলছেন, “এখন পরিস্থিতি বিপরীতে থাকায়, প্রধান প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীন সব কথাবার্তা বলছেন।” অন্য দিকে, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হান্নান খানের দাবি, “কেউ ওঁদের ভুল বুঝিয়েছেন। ওই সদস্যেরা আমাদের কথা শুনবেন। তবে, শেষপর্যন্ত অনাস্থা পাশ হবে না।”