শ্রীমতি ছবির একটি দৃশ্যে।
বাংলা ছবির পর্দায় একে অন্যের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। এ বার সেই নায়ক-নায়িকাই মুখোমুখি ভোটের ময়দানে। শনিবারই বীরভূম কেন্দ্রে তাদের ‘সেলিব্রেটি’ প্রার্থী হিসেবে এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। তার পর থেকেই অবশ্য ফ্যানেদের মধ্যে চর্চা তুঙ্গে। হেভিওয়েট প্রার্থী, গত বারের সাংসদ শতাব্দী রায়কে বিস্মৃতপ্রায় এই নায়ক বেকায়দায় ফেলতে পারবেন কি না, তা দেখতেই মুখিয়ে আছে বীরভূম।
জয় অবশ্য জানাচ্ছেন, শতাব্দী তাঁর বন্ধু। ভোটের ময়দানে একে অপরের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেও সেই সম্পর্কে কখনও চিড় ধরবে না। তাঁর কথায়, “আমার আর শতাব্দীর কর্মক্ষেত্র এক হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশল সম্পূর্ণ আলাদা। ও ওর কথা বলবে। আমি আমার কথা বলব। আমার নীতি হল, কেউ যদি তোমাকে ধমকায় তাকে তুমি ‘আই লভ ইউ’ বলো। দেখবে সে তোমাকে ঠিকই আপন করে নেবে।” ওই রণকৌশল নিয়েই ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘মিলন তিথি’র মতো হিট ছবির নায়ক বীরভূমের মানুষের মন ‘জয়’ করবেন বলেই দাবি করছেন।
এ দিকে নায়ক-নায়িকার এমন দ্বৈরথে মজেছেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মানুষও। জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়াই তৈরি হয়েছে। জয়ের বেশ কয়েকটি ছবির মতোই ‘বহু দূর থেকে...’ কিংবা ‘আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ’-এর মতো গান এক সময় খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। “কিন্তু সেই ছবির নায়ককে কি মানুষ এখনও মনে রেখেছেন? ওঁকে প্রার্থী করে বিজেপি একটা ফাটকা খেলল। কিন্তু সেটা খুব একটা কাজে দেবে বলে মনে হয় না,” কথাগুলো বলছিলেন রামপুরহাটের মাসড়া গ্রামের বোম হোসেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, গ্রামের মানুষের চরিত্রে অভিনয় করা এক। আর গ্রামের মানুষের হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সুখদুঃখের ভাগীদার হওয়া আর এক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “শতাব্দী-ই বলুন আর জয় বলুন। ওই সব সিনেমা জগতের নায়ক-নায়িকাদের দিয়ে আর যা-ই হোক, গ্রামের আর্থিক-সামাজিক বিকাশ হয় না। দরকারের সময়ে কারও দেখা মেলে না।” এ দিকে, শতাব্দীর তুলনায় জয়ের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার দিকটিও মনে করিয়ে দিচ্ছেন নলহাটির বুজুং গ্রামের ডালিম পাল। তিনি বললেন, “জয় বন্দ্যোপাধ্যায় নায়ক হিসেবে ভাল। কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় তার কোনও পরিচিতি নেই। তাই তিনি এ বারের ভোটে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।” মাড়গ্রামের বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক অপূর্ব চৌধুরী আবার মনে করছেন, “জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন সেলিব্রিটি প্রার্থী। সুতরাং তিনি বাড়তি কিছু ভোট তো পাবেনই।”
সাংসদের হালখাতা
জয় অবশ্য বিশ্বাস করেন, বাংলার মানুষ গ্রামের ছেলে হীরুর (হীরক জয়ন্তী ছবির নায়ক চরিত্র) অভিনয় দেখেছেন। তাঁরা আজও হীরুকে মনে রেখেছেন। তাঁর দাবি, গ্রামের মানুষের হয়ে কাজ করার কথা তিনি-ই দলের কাছে জানিয়েছিলেন। তাই যে দিন তাঁকে বীরভূম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তিনি তা লুফে নেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভক্ত জয় বলছেন, “অভিনয়ের সূত্রেই বীরভূমের মাটির সঙ্গে আমার পুরনো পরিচয়। বহু সিনেমার শুটিংয়ে একাধিকবার এখানে এসেছি। এখানে যাত্রা করেও মানুষের বিনোদন করেছি। সুযোগ দিলে সব রকমের সমস্যায় এ বার আপনাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।” আর তাঁকে নিয়ে শতাব্দীর প্রতিক্রিয়া, “জয় আমার বন্ধু। ও প্রার্থী হওয়ার পরে কোনও কথা হয়নি। এটা রাজনৈতিক লড়াই। কারও বিরুদ্ধে কিছু বলা বা মন্তব্য করা আমি পছন্দ করি না।”
নাম ঘোষণার পরে এ দিনই ভোট প্রচারে নেমে পড়লেন ওই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। রবিবার সকালে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবন হাইস্কুলে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি কর্মিসভা করেন। মিছিলও বের হয়। পরে জিম্মি বলেন, “রাজ্যের যুব সম্প্রদায়কে নিয়ে বর্তমান শাসক দল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। তাঁরা এখন সরকারের বিরোধিতায় নামার জন্য প্রস্তুত।” দুই নায়ক-নায়িকা প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “এক নায়িকাকে সাংসদ করে বীরভূমের মানুষ গত পাঁচ বছর ধরে ভুগছেন। তিনি সবার কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে ব্যর্থ। এ বারও তিনি-ই প্রার্থী হয়েছেন। উল্টো দিকে এখন আবার এক নায়কও হাজির হয়েছেন।” তাঁর দাবি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই সব নায়ক-নায়িকাদের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।
এ দিকে, আগামী ১৩ মার্চ থেকেই বন্ধুর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামতে চলেছেন জয়। শতাব্দীর পথেই তিনিও প্রথমে যাবেন তারাপীঠে পুজো দিতে। তার পরে যাবেন পাথরচাপুড়িতে দাতাবাবার মাজারে।