গেরুয়া ঝড়ের দাপট, সঙ্কটে তৃণমূল

কয়েক মাসের মধ্যেই সাঁইথিয়ায়। বছর খানেকের মধ্যে সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটেও। জেলায় ৬টির মধ্যে ৪টি পুরসভার ভোটই দোরগোড়ায় চলে এসেছে। কিন্তু তার আগেই চোখ কপালে উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের। কারণ, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তিনটি পুরসভায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। একটিতে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। অথচ সব ক’টি পুরসভাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বোর্ড রয়েছে তৃণমূলের।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০০:৩৬
Share:

কয়েক মাসের মধ্যেই সাঁইথিয়ায়। বছর খানেকের মধ্যে সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটেও। জেলায় ৬টির মধ্যে ৪টি পুরসভার ভোটই দোরগোড়ায় চলে এসেছে। কিন্তু তার আগেই চোখ কপালে উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের। কারণ, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তিনটি পুরসভায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। একটিতে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। অথচ সব ক’টি পুরসভাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বোর্ড রয়েছে তৃণমূলের। শুধু ওই চারটিই নয়, বিজেপির কাছে তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে সদ্য বিপুল ভোটে জেতা দুবরাজপুর পুরসভাও। শাসক দলকে তুলনায় স্বস্তি দিয়েছে নলহাটির ফল। সেখানেও অবশ্য দলের আসন কমেছে। দলীয় সূত্রের খবর, জেলার প্রতিটি পুরসভায় বিজেপির কাছে তৃণমূলের এমন বিপর্যয়ের পরে ক্ষুব্ধ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তবে আপাতত এই ‘ভরাডুবি’ কীভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে জেলার শীর্ষ নেতৃত্বে।

Advertisement

জেলার মোট ৬টি পুরসভার মধ্যে ৫টিই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের কেবল একটি। লোকসভার ফল বলছে, বীরভূম কেন্দ্রের চারটি সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাটে বিপুল ভাব এগিয়ে বিজেপি। বোলপুর পুরসভায় তারা তৃণমূলের থেকে মাত্র ৪টি আসনে পিছিয়ে। সেখানে আবার ৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে। একমাত্র নলহাটিতে ফল তৃণমূল ৮, বিজেপি ৪। সেখানে তিনটি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। প্রত্যেকটি পুরসভাতেই ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস ও বামেরা।

এ দিকে, সাঁইথিয়ায় পুর নির্বাচন হতে আর হাতেগোনা দিন বাকি। কয়েক মাস আগেই অন্য দলের কাউন্সিলরদের দলে টেনে দীর্ঘদিন কংগ্রেসের দখলে থাকা এই পুরবোর্ড তৃণমূল নিজেদের হাতে এনেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, আর কোনও প্রতিপক্ষ রইল না। কিন্তু তবুও শেষরক্ষা হল না। অন্তত এই লোকসভা ভোটে সাঁইথিয়ার ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলের পর এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। সাঁইথিয়া শহরে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ১৫,০৬৬, তৃণমূলের ৭,৩১১, বামেদের ২,৫৩১ এবং কংগ্রেস ১,১১৭। অর্থাৎ বিজেপি তৃণমূলের প্রায় দ্বিগুন ভোটে এগিয়ে গিয়েছে। আবার সিউড়িতে তৃণমূল বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার ভোটে। দুবরাজপুরে প্রায় হাজার ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। সাঁইথিয়ার মতোই বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে রামপুরহাটেও। সেখানে তারা শাসক দলের থেকেও ৮,২৩৭টি ভোটে এগিয়ে। তুলনায় নলহাটিতে কিছুটা এগিয়ে তৃণমূল। তৃণমুল ৮,৬৯২, সিপিএম ৬,২৫৩, বিজেপি ৪,৯৪৪ ও কংগ্রেস ২,৯৯০। বোলপুরে আবার গত পুরভোটে বিজেপি একটিও আসন না পেলেও লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তারা ২, ৯, ১১, ১৩, ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই ৭টি আসনে এগিয়ে আছে। গত ভোটের হিসেবে জেলার এই ছ’টি পুরসভার মোট ১০১টি ওয়ার্ডে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৬। সেখানে বর্তমানে সেই হিসেব দাঁড়িয়েছে ৬৩!

Advertisement

রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, এ বার তুমুল মোদী হাওয়ার কারণেই রাজ্যের শাসক দল শহরগুলিতে তুলনায় খারাপ ফল করেছে। তারই সঙ্গে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীও ভাল ‘ফাইট’ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে আগের তুলনায় বিজেপির ফল ভাল হয়েছে। কিন্তু দু’দলেরই নীচুতলার নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটের চরিত্রে আর পুরভোটের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। পুরভোটের জেতা-হারা নির্ভর করে অনেকটাই স্থানীয় দাবি-দাওয়ার উপর ভিত্তি করে। সেখানে দলীয় সংগঠনের ভূমিকাও অনেকটা বেশি। তার নিরিখে লোকসভার এই ফল বিজেপির পক্ষে ধরে রাখা খুবই মুশকিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও বলেন, “শুধু এই জেলাই নয়, রাজ্যের অন্যত্র বা দেশজুড়ে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছিল। বিজেপির প্রতি সমর্থন, তারই বহিঃপ্রকাশ। তবে, পুরভোটে এর কোনও প্রভাবই পড়বে না।”

জেলা বিজেপি সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরী অবশ্য তৃণমূলের ওই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। পুরভোটে ওই প্রত্যেকটি পুরসভায় তাঁরা দখল করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “তৃণমূলের যদি দম থাকে তা হলে এই ফলাফলের নিরিখে যে সব পুরসভায় তৃণমূল পরাস্ত হয়েছে, সেই প্রত্যেকটি পুরবোর্ডই ভেঙে দিক। ভোটে লড়ে নিজেদের পক্ষে জনাদেশ নিয়ে এসে দেখাক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement