বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ থেকে জয়রামবাটি যাওয়ার ৩০ কিলোমিটার রাস্তার এমনই বেহাল দশা। বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এই রাস্তার সংস্কার নিয়ে গড়িমসির খবরে চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।
রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে গর্তে ভরে উঠেছে। একে একে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বাস। বাঁকাদহ-জয়রামবাটি ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বাসিন্দারা গত কয়েক বছর ধরে অনেক জায়গায় দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু পিচ পড়েনি। হঠাৎ করে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সাংসদ সেই রাস্তার হাল তুলে ধরায় হইচই পড়ে গেল। টাকা বরাদ্দ করার পরেও সংস্কার শুরু না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাওয়াই দিয়ে গেলেন। মুখ্যমন্ত্রী রাস্তাটির বিষয়ে নজর দেওয়ায় বাসিন্দারা বলছেন, এতদিন আমরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি, তা যে ন্যায্য মুখ্যমন্ত্রী তৎপর হতে নির্দেশ দেওয়ায় সেটাই প্রমাণিত হল।
বাঁকুড়া জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ-জয়রামবাটি ৩০ কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে বহুকাল ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের বামফ্রন্ট আমলেই রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়ে। সেই সময়ে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এখন তৃণমূল সরকারের আমলেও ওই রাস্তা বেহাল হয়েই পড়ে রয়েছে। শুক্রবার বেলিয়াতোড়ের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৯২টি রাস্তার (মোট ২৯০ কিলোমিটার) শিলান্যাস করেন। অথচ বাঁকাদহ-জয়রামবাটি রাস্তাটি সংস্কারে প্রশাসনের কর্তারা উদ্যোগ না দেখানোয় এলাকার বাসিন্দারা অসন্তুষ্ট। যদিও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্তাদের আশ্বাস, ওই রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব নেওয়া আছে। শীঘ্রই সেই কাজ শুরু হবে।
বাঁকাদহ-জয়রামবাটি রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে বিষ্ণুপুর থানার বাঁকাদহ, চাঁচর, বেলশুলিয়া, জয়পুর থানার মাগুরা, পড়াইরি, বৈতল, কোতুলপুর থানার রামডিহা, সিহড় ইত্যাদি গ্রাম। ফলে ওই রাস্তার উপর বিষ্ণুপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু রাস্তাটি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় ক্রমশ ভাঙতে ভাঙতে এখন খানাখন্দে ভরে উঠেছে। বাসিন্দাদের দাবি, বাঁকাদহ থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত পুরো রাস্তাটি খানা খন্দে ভরা। এখন বর্ষায় গর্তে ভরে গিয়েছে রাস্তার গর্ত। শীত-গ্রীষ্মে রাস্তায় ধুলো ওড়ে। তাঁদের অভিযোগ, এক সময় এই রুটে প্রায় ৩০টি বাস চলাচল করত। এখন মাত্র কয়েকটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে এই রাস্তায় বিষ্ণুপুর বা কামারপুকুর কলেজে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা বিশেষত সমস্যায় পড়ছেন।
এলাকার মানুষের ক্ষোভ, রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে এই রাস্তার হাল খারাপ হয়ে পড়ে। তখন থেকেই মেরামতির দাবিতে তাঁরা সরব হয়েছেন। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরেও একাধিক বার তাঁরা পথ অবরোধ করে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি তুলেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছ থেকে ওই রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে, হবেই শুনে আসতে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ হচ্ছে না।
বাঁকুড়ার দক্ষিণ প্রান্তের জঙ্গলমহলের সঙ্গে হুগলি জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তাও এটি। মেদিনীপুর থেকে বিষ্ণুপুর হয়ে বাঁকুড়া যাওয়ার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং বিষ্ণুপুর থেকে কোতুলপুর হয়ে জয়রামবাটি যাওয়ার রাস্তার মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে এই রাস্তা। ফলে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাবাসীর কাছে এই রাস্তাটির গুরুত্ব অসীম। তা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন এই রাস্তা সংস্কারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, এই প্রশ্নে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
পড়াইরি গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন চট্টোপাধ্যায় এখন বিষ্ণুপুর শহরে থাকেন। তাঁর ক্ষোভ, “মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়। ওই রাস্তায় দিয়েই আত্মীয়দের বাড়িতেও যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় এখন বাস কমে গিয়েছে। তাই ওই রুটের বাস ধরতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।” ওই রাস্তা দিয়ে বাসে কামারপুকুর কলেজে যায় পড়ুয়া বিপ্লব চৌধুরী। তিনি বলেন, “রাস্তা খারাপ থাকায় অত্যন্ত ধীর গতিতে বাস চলে। কলেজে পৌঁছতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়।” ওই রুটের বাস চালকদের একাংশ যাত্রীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে জানিয়েছেন, “খারাপ রাস্তার কারণে বাসের যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক মালিক এই রুট থেকে তাই বাস তুলে নিয়েছেন। যে ক’টি বাস চলছে, আমাদের আশঙ্কা তাও যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
ওই রাস্তার উপর নির্ভরশীল গ্রামবাসীর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় অনেকগুলি রাস্তার শিলান্যাস করলেন। ভাল উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের রাস্তাটি এত দিন কেন অবহেলিত হল? তবে শেষ পর্যন্ত রাস্তাটির কথা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসায় আশাকরি এ বার দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি করেছেন, “এত দিন বামফ্রন্ট সরকার রাস্তাটি সংস্কার করেনি। তবে তৃণমূল সরকার ওই রাস্তা সংস্কার করবে। সংস্কারের প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। বর্ষা কাটলেই শীঘ্রই আমরা ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করে দেব।”
বিজেপির বিষ্ণুপুর মহকুমা কমিটির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেছেন, “এ বার আর হচ্ছে হবে বললে শুনব না। শীঘ্রই ওই রাস্তায় কাজ শুরু না করা হলে দলীয় কর্মীদের নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব।”