অমিয়র জায়গায় কে, জল্পনা শুরু সিপিএমে

এক সময়ে যে জেলা ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি, আজ সেখানেই তাদের কার্যত খুঁজে পাওয়া যায় না। সংগঠন চূড়ান্ত ঢিলেঢালা, বড় কোনও আন্দোলন নেই অনেক দিন হল, নিচুতলার অনেক কর্মী হয় হতাশায়, না হলে শাসকদলের সন্ত্রাসের ভয়ে নিষ্ক্রিয়। অনেকে আবার নাম লিখিয়েছেন বিজেপি-তে। জেলার নাম বাঁকুড়া। দলের নাম সিপিএম। এত দিন তাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচন থেকে তার দোসর হয়ে সমানে টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যের অন্য জেলার মতোই বাঁকুড়াতেও এখন রাজনীতির জমি দখলের মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

এক সময়ে যে জেলা ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি, আজ সেখানেই তাদের কার্যত খুঁজে পাওয়া যায় না। সংগঠন চূড়ান্ত ঢিলেঢালা, বড় কোনও আন্দোলন নেই অনেক দিন হল, নিচুতলার অনেক কর্মী হয় হতাশায়, না হলে শাসকদলের সন্ত্রাসের ভয়ে নিষ্ক্রিয়। অনেকে আবার নাম লিখিয়েছেন বিজেপি-তে।

Advertisement

জেলার নাম বাঁকুড়া। দলের নাম সিপিএম। এত দিন তাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচন থেকে তার দোসর হয়ে সমানে টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যের অন্য জেলার মতোই বাঁকুড়াতেও এখন রাজনীতির জমি দখলের মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র। সিপিএম সেখানে কোথাও নেই। এমনই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার থেকে সোনামুখীর সাংস্কৃতিক ভবনে শুরু হতে চলেছে সিপিএমের ২১ তম জেলা সম্মেলন। দু’দিনের এই সম্মেলনে সরে যেতে চলেছেন দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র। তাঁর জায়গায় এ বার কে, তা নিয়েই দলে এখন জল্পনা। তৃণমূল ও বিজেপি-র মোকাবিলা করে হারানো জমি উদ্ধারে দলে কার হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়, তা দেখতে মুখিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহল।

দীর্ঘদিন ধরে সিপিএমের গড় হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ায় এখন এই দলের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় ভরাডুবি হয়েছে সিপিএমের। জেলায় ২৩টি জোনাল কমিটি ছিল সিপিএমের। এখন তিনটি কমিটি ভেঙে হয়েছে ২০টি। পাত্রসায়র, বাঁকুড়া-১ ও বাঁকুড়া-২ ব্লকের জোনাল কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতারা জানাচ্ছেন, প্রতিটি ব্লকে অন্তত চারটি করে লোকাল কমিটি থাকলে সেখানে জোনাল কমিটি গড়া যায়। কিন্তু পাত্রসায়রে মাত্র দু’টি এবং বাঁকুড়া ১ ও বাঁকুড়া ২-এ তিনটি করে লোকাল কমিটি রয়েছে। তাই এই ব্লকগুলিতে জোনাল কমিটি ভেঙে ফেলতে হয়েছে। বাঁকুড়ার দু’টি ব্লকের জন্য আগে দু’টি জোনাল কমিটি ছিল। বাঁকুড়া শহরের জন্য আলাদা একটি জোনাল কমিটি ছিল। ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ শহর-সহ দু’টি ব্লকের জন্য একটিই জোনাল কমিটি গড়া হয়েছে। জেলায় সিপিএমের লোকাল কমিটি ছিল ১২৭টি। চার কমে তা দাঁড়িয়েছে ১২৩-এ। জেলার সিপিএম নেতারা যাই বলুন না কেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, জনসর্থন এমনিতেই তলানিতে এসে ঠেকেছিল। এখন বহু কর্মীও দল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই কমিটি ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে সিপিএম।

Advertisement

বেশ কয়েকটি জোনাল কমিটিতে নতুন মুখ এনে এ বার ইতিমধ্যেই চমক দিয়েছে সিপিএম। ২০টি জোনাল কমিটির মধ্যে ১৫টিতে জোনাল সম্পাদক হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন মুখ। এঁদের মধ্যে ১১ জন বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য নন। ফলে, সেই ১১ জনকে জেলা কমিটিতে রাখতে গিয়ে কাদের বাদ দেওয়া হবে, তা নিয়েও দলের মধ্যে শুরু হয়েছে জল্পনা। ২০১১ সালে ২০তম জেলা সম্মেলনের পরে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা গিয়েছিল জেলা কমিটিতে। সে বার ৫৫ জনের জেলা কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল আলিমুদ্দিন। এ বারও সংখ্যাটা এক থাকছে। তাই নতুন ১১ জন জোনাল সম্পাদককে জেলা কমিটিতে ঠাঁই দিতে গিয়ে, কাদের বাদ দেওয়া হবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে। অমিয়বাবু এ বিষয়ে বলেন, “নতুন ও পুরনো জেলা কমিটির সদস্যদের কাজের বিশ্লেষণ করা হবে। আদৌ কেউ বাদ যাবেন কিনা, তা সম্মেলনেই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের জায়গা কাকে দেওয়া হবে, তা-ও চূড়ান্ত হবে এই জেলা সম্মেলনে। দলে সেটা নিয়েই চর্চা চলছে। ১৯৯৫ সাল থেকে দলের জেলা সম্পাদক পদে রয়েছেন অমিয়বাবু। জেলায় দলকে এত দিন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এই জেলায় সিপিএমের শক্তি বৃদ্ধিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অমিয়বাবুর সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা শোনা যায় সিপিএম-বিরোধী দলের একাধিক নেতার মুখেও। এ হেন অমিয়বাবুর জায়গায় কে বসতে চলেছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। সিপিএমের চিরাচরিত প্রথা মেনে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে থেকেই কাউকে বেছে নেওয়া হবে নাকি সম্পাদকমণ্ডলীর বাইরে থেকে কোনও নতূন মুখ এনে চমক দেওয়া হবে, তা দেখতে আগ্রহী অনেকেই। তাঁর জায়গায় কে উঠে আসবেন, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও বড়সড় চমক থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অমিয়বাবু নিজেই। তাঁর মন্তব্য, “জেলা কমিটির সদস্যেরাই জেলা সম্পাদক ঠিক করেন। তাঁরা চাইলে সম্পাদকমণ্ডলীর বাইরে থেকেও কেউ উঠে আসতে পারেন, এই নিয়মও আমাদের দলে রয়েছে।”

সিপিএমের নেতৃত্ব বদলকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএমের পুরনো নেতারা এখন মানুষের চোখের বালি। জনসমর্থন হারিয়ে ওঁরা এখন তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে নতুন মুখ নিয়ে এসে ভেল্কি দেখালেও মানুষের সমর্থন পাবে না সিপিএম!”

২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের ঝড়ে কং-তৃণমূল জোটের সামনে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল সিপিএম। পঞ্চায়েত ও লোকসভাতেও সেই ধারা অব্যাহত। তবে এক দিকে সারদা-কাণ্ডে শাসকদলের জড়িয়ে পড়া, অন্য দিকে বিজেপির উত্থানে রাজ্য রাজনীতি এখন এক নতুন বাঁকের মুখে। জেলাতেও তার ছায়া পড়েছে। এ হেন পরিস্থিতিতে বাঁকুড়ায় সিপিএমের রাশ কে ধরবেন, এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement