purulia

মোরগের পায়ের ছুরির আঘাতে মৃত যুবক

ওই ঘটনার পরে মোরগ লড়াইয়ের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, আপৎকালীন কী কী ব্যবস্থা সেখানে ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জানাচ্ছে, মোরগ লড়াইয়ের জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। আপাতত পুরুলিয়া সদর থানা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪৬
Share:

ঘটনাস্থল: জোড়গড়া ময়দানে মোরগ লড়াইয়ের এই আখড়ায় মৃত্যু হয় যুবকের। নিজস্ব চিত্র

মোরগ লড়াইয়ের আসরে মোরগের পায়ের ধারাল ছুরির আঘাতে প্রাণ গেল এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়ার কাশীপুর থানা এলাকার জোড়গড়ায় এক মোরগ লড়াইয়ের আখড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম অসীম মাহাতো (২৯)। তাঁর বাড়ি হুড়া থানার আসনবনি গ্রামে।

Advertisement

ওই ঘটনার পরে মোরগ লড়াইয়ের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, আপৎকালীন কী কী ব্যবস্থা সেখানে ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জানাচ্ছে, মোরগ লড়াইয়ের জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। আপাতত পুরুলিয়া সদর থানা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। মেলা হতে পারে। কিন্তু সেখানে অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত, পুলিশ দেখবে।’’

হুড়া ও কাশীপুর— দুই থানা এলাকার সংযোগস্থলে জোড়গড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিনের মেলা শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই মেলায় মোরগ লড়াই হয়ে আসছে। যা ‘পালগাঁর লড়াই’ নামে পরিচিত। বৃহস্পতিবার সেখানেই নিজের মোরগ নিয়ে গিয়েছিলেন পেশায় গাড়িচালক অসীম। আসনবনিতে তাঁর বাড়ি হলেও শৈশবে দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি মামাবাড়ি কাশীপুরের রুদড়া গ্রামেই ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, আসরে লড়াইয়ের জন্য কাজের ফাঁকে বেশ কিছু দিন ধরে নিজের মোরগটিকে তৈরি করেছিলেন অসীম। তাঁর মোরগ বিপক্ষের মোরগকে হারিয়েও দেয়। তারপরেই ঘটে দুর্ঘটনা।
লড়তে নামা দু’টি মোরগের পায়ে বাঁধা থাকে ধারাল ছুরি। লড়াইয়ের ময়দানে যা ‘কাইত’ নামে পরিচিতি। লড়াই করতে করতে ছুরির আঘাতে একটি মোরগ ঘায়েল হয়। তখন যাঁর মোরগ জয়ী হয়, তাঁকেই পরাজিত মোরগটি (পাহুড়) তুলে দেওয়া হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুর প্রায় ২টো নাগাদ প্রতিপক্ষের হারিয়ে দেওয়া মোরগটিকে হাতে ঝুলিয়ে আখড়া থেকে বার হচ্ছিলেন অসীম। সেই সময় আখড়ায় অন্য এক জোড়া মোরগের লড়াই চলছিল। হঠাৎ সেখান থেকে একটি মোরগ নিমেষে ছু়টে এসে অসীমের হাতের ঝুলন্ত মোরগটিকে আক্রমণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসীম দ্রুত নিজের মোরগটি সরিয়ে নিলেও আক্রমণকারী মোরগের পায়ে বাঁধা ধারাল ছুরির আঘাতে তাঁর ডান হাঁটুর পিছন দিকের কিছুটা কেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত ঝরতে শুরু করে। মাঠে অসীম লুটিয়ে পড়লেও মোরগ লড়াইয়ে ব্যস্ত দর্শকেরা প্রথমে তা টের পাননি। বেশ কিছুক্ষণ সে ভাবেই অসীম পড়ে থাকেন। পরে লোকজনের নজরে এলে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

অসীমের সম্পর্কিত এক দাদা বিবেক মাহাতো জানান, তিনি সেই সময়ে মেলার অন্যপ্রান্তে ছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে যান। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য মোরগের আক্রমণে ভাইয়ের যে পা কেটে গিয়েছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন প্রথমে তা বুঝতেই পারেননি। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। কাছাকাছি গাড়ি ছিল না। শেষে কাঁধে তুলে বড় রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ভাইকে মোটরবাইকে তুলে হুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। হুড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষত দেখেই স্থানান্তর করে দেয়। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো গেল না।’’ অসীমের এক আত্মীয় হরেন মাহাতো জানান, পুরুলিয়ায় অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই অসীম মারা যান।

এই মোরগ লড়াইয়ের জন্য মানুষ খরচ করে দক্ষিণ ভারত থেকেও মোরগ কিনে আনেন। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকেও লোকে মোরগ নিয়ে আসরে আসেন। কিন্তু তার পরেও এখানে কেন অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকে না? মোরগ লড়াইয়ের জন্য কি পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন উঠছে এ সব নিয়ে। চেষ্টা করেও মোরগ লড়াইয়ের আয়োজকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেলা কমিটির তরফে দাবি করা হয়েছে, মেলার জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন তাঁরা করেন না। তবে অসীমের প্রাথমিক চিকিৎসা মেলা কমিটির তরফে করা হয়েছিল বলে তাঁরা দাবি করেছেন। এ দিকে, শুক্রবার পুলিশ গিয়ে মোরগের লড়াই বন্ধ করে দেয়। তবে মেলা চলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement