Antenna

নিমেষে তথ্য আদানপ্রদান, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা আবিষ্কার করলেন বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী

ওয়্যারলেস যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বছর ২৪ আগে দিগন্ত খুলে দিয়েছিল ব্লুটুথের আবিষ্কার। এ বার ব্লুটুথের তুলনায় একশো গুণ গতিতে তথ্য আদানপ্রদানের যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি শ্রীকান্ত পালের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২ ১৭:২২
Share:

‘বোতাম অ্যান্টেনা’ আবিষ্কার করে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট অ্যান্টেনা আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিলেন বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী শ্রীকান্ত পাল। মাত্র ১৪ মিলিমিটার লম্বা এবং ১১ মিলিমিটার চওড়া এই অ্যান্টেনা ওয়্যারলেস যোগাযোগের যাবতীয় ধ্যানধারণাকেই বদলে দেবে বলে দাবি করছেন এই বিজ্ঞানী। ২০১৩ সালে ওই অ্যান্টেনার পেটেন্টের আবেদন করা হয়েছিল। সম্প্রতি ওই অ্যান্টেনার জন্য যৌথ ভাবে পেটেন্ট পেয়েছেন রাঁচির বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক শ্রীকান্ত পাল এবং তাঁর সহযোগী তৎকালীন পিএইচডি ছাত্র মৃন্ময় চক্রবর্তী।

Advertisement

ইন্টারনেট ছাড়া ওয়্যারলেস যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বছর ২৪ আগে দিগন্ত খুলে দিয়েছিল ব্লুটুথের আবিষ্কার। দ্রুত এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে তথ্য সরবরাহের কাজে ব্লুটুথ প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ব্লুটুথের মতো ওয়্যারলেস প্রযুক্তিকে কী ভাবে আরও শক্তিশালী এবং দ্রুত করা যায়, তা নিয়ে সর্বত্র গবেষণা চলছে। এই জায়গাতেই চমক দিলেন বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী। সহযোগী মৃন্ময় চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক শ্রীকান্ত পাল আবিষ্কার করেছেন এমন এক অ্যান্টেনা, যা আকারে একটি বোতামের মতো। ব্লুটুথের তুলনায় এর তথ্য আদান প্রদানের গতি একশো গুণ বেশি বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানী।

শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের অ্যান্টেনার নাম আল্ট্রা ওয়াইড ব্যান্ড অ্যান্টেনা। বোতামের মতো দেখতে বলে অনেকে একে বোতাম অ্যান্টেনাও বলছেন।’’ বিজ্ঞানীর সংযোজন, “২০১৩ সালে এই অ্যান্টেনা আবিষ্কারের পর পেটেন্টের জন্য পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট দফতরে। প্রায় ৯ বছর পর পেটেন্ট অফিস চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর যন্ত্রটির পেটেন্ট দিয়েছে। পেটেন্ট লাভের পর থেকেই দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দনবার্তা পেয়েছি। বিভিন্ন দেশীয় এবং বহুজাতিক সংস্থার তরফে এই অ্যান্টেনা বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য আমার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমি এত আনন্দ পেয়েছি যে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এই আবিষ্কার আমার দেশকে উৎসর্গ করছি।”

Advertisement

এই অ্যান্টেনার বিশেষত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানী বলেন, “এর ফ্রিকোয়েন্সি ১.৮ গিগাহার্জ থেকে ১৮ গিগাহার্জ পর্যন্ত। তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টেনা ব্যবহার করবে ১০ অনুপাত ১ ব্যান্ডউইডথ। আকারে ছোট হওয়ায় এটা চালানোর জন্য বেশি শক্তি অর্থাৎ বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। এটা কোনও মোবাইল ফোন বা স্মার্ট যন্ত্রাংশে ব্যবহার করা সম্ভব। দুটির বেশি যন্ত্রে এই অ্যান্টেনা লাগানো থাকলে ওই যন্ত্রগুলি ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও ইন্টারনেট ছাড়াই পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চোখের নিমেষে বড় বড় তথ্য লেনদেন করতে পারবে।’’

বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা শ্রীকান্ত বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ওয়ারাঙ্গেল আরই কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি পান। পরে যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট করেন। দিল্লি এবং রুরকি আইআইটিতে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে রাঁচির মেসরায় বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এর আগে নাসার গ্রিন ব্যান্ড টেলিস্কোপের সঙ্কেত সংগ্রহ সংক্রান্ত দীর্ঘকালীন সমস্যার সমাধান করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন শ্রীকান্ত। ব্রিটেনের জড্রেল ব্যাঙ্ক মানমন্দিরে থাকা টেলিস্কোপের সঙ্কেত সংক্রান্ত সমস্যাও দূর করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement