পদ্মাবতী মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
বহু প্রতীক্ষার পরে লোকসভায় পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। লোকসভা ও বিধানসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে মহিলাদের সংরক্ষণে এই বিল তবে ঠিক ভাবে কার্যকর করা দরকার, মনে করেন পুরুলিয়া-১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ্মাবতী মাহাতো। পাঁচ বার এই দায়িত্ব সামলানো পদ্মাবতী বলেন, “এর আগে রাজীব গান্ধী মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছিলেন। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করে দেখিয়েছেন। রাজ্যে এত মহিলা যে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত, তা তার জন্যই।”
১৯৯৩-এ প্রথম বার গাড়াফুসড়ো পঞ্চায়েতের একটি সংসদে ভোটে লড়েন। তার পরে থেকে পঞ্চায়েত ভোটের ময়দান কখনও খালি হাতে ফেরায়নি পদ্মাবতীকে। বাম আমলে ১৯৯৮-এ পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের হয়ে লড়ে জয় পান। সে বারই প্রথম সভাপতি হন। ২০০৩-এ জয়ী হলেও কংগ্রেস পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিরোধী আসনে বসতে হয় তাঁকে।
এর পরে, ২০০৮ থেকে ২০২৩, পরপর পঞ্চায়েত ভোটে জয় মিলেছে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস থেকে জিতে সভাপতি হলেও দেওর, বর্তমানে তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে পদ্মাবতীও দল বদলান। বরাবরই রাজনীতির আবহ ছিল পদ্মাবতীর পরিবারে। তাঁর শ্বশুর রামকৃষ্ণ মাহাতো জেলার জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বামী পরীক্ষিৎ মাহাতোও ১৯৭৮ ও ১৯৮৮, দু’বার সভাপতির আসনে বসেন। পদ্মাবতীর রাজনীতিতে হাতেখড়ি স্বামী বেঁচে থাকাকালীনই। তিনি বলেন, “পারিবারিক সংস্কৃতি মেনে ও এলাকার মানুষ চেয়েছেন বলেই কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ যে তাঁরা বারেবারে তাঁদের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের এই পর্বে পদ্মাবতীর জীবনযাত্রায় বড়সড় কোনও পরিবর্তনের কথা লোকমুখে শোনা যায় না। দূরে থেকেছেন বিতর্ক থেকে। বোর্ড-গঠন পর্বে ব্লকের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বারও দল তাই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে প্রচারের আড়ালে থাকা পদ্মাবতীকে বেছে নিয়েছিল। পদ্মাবতী বলেন, “মানুষের হয়ে কাজ করার ধারা পরিবারেই ছিল। সেই পথে এগিয়ে চলে সাফল্য পেয়েছি।”
তবে কাগজে-কলমে রাজনীতিতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে ছবিটা কতটা আলাদা? পদ্মাবতীর কথায়, “দায়িত্ব পালনে সব সময়ে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দিনেও সে ভাবে কাজ করতে চাই। অন্যদেরও বলব, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হন। তবেই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন আসবে।” (চলবে)