প্রতিটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ, তা-ই এক জন ভোটারও যেন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে না থাকেন— এমনই কথা মনে রেখে দেশের বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের মধ্যে নির্বাচনী সচেতনতা গড়ে তুলতে চায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে ভবিষ্যতের ভোটার ১৪ থেকে ১৭ বছরের পড়ুয়াদের সচেতন করতে দেশের স্কুলে স্কুলে নির্বাচনী সাক্ষরতা ক্লাব (ইলেক্টরাল লিটারেসি ক্লাব) তৈরির কাজ চলছে।
বীরভূমে কয়েকটি স্কুলে এমন ক্লাব গড়ে তুলতে ফুটবলকে ‘অস্ত্র’ করল জেলা নির্বাচনী দফতর। কারণ দু’টি, এক ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে উন্মাদনার রেশ থিতিয়ে যেতে না দেওয়া। দুই সম্প্রতি ‘খেলো ইন্ডিয়া’ জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জেলা ফুটবল দলের দেশের সেরা হওয়ার সাফল্য।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জেলাসদর ও আশপাশের সাতটি স্কুল (যেখানে ইএলসি তৈরি হবে) এবং দেশের সেরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দল মিলিয়ে আটটি ফুটবল দল তৈরি করা হয়েছে। দু’টি গ্রুপে ভাগ করে ২৪ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৪টে পর্যন্ত খেলা হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে। প্রতিযোগিতার নাম দেওয়া হয়েছে— ‘ইএলসি ফিউচার ইলেক্টরস ফুটবল লিগ’। কেন এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন তা ফুটবল মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে দেখতেই বুঝতে পারবে স্কুলপড়ুয়া দর্শকেরা।
ওসি (ইলেকশন) সৈকত হাজরার কথায়, ‘‘জাতীয় নির্বাচন কমিশন চায় নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা খেলাধুলোর মাধ্যমেই যেন সূচনা হয় ইলেক্টরাল লিটারেসি ক্লাবের। আমরা ফুটবলকেই বাছলাম।’’
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ১৯ জুলাই একটা চমক রেখেছে প্রশাসন। সেই দিন প্রতিযোগিতার সূচি, চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স ট্রফি প্রকাশ, প্রতিটি দলের নামাঙ্কিত জার্সি উদ্বোধন, দু’টি করে ম্যাচ বল দেওয়া, গ্রুপ ফোটোসেশন হবে জেলা প্রশাসনের প্রেক্ষাগৃহে। উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক, ক্রীড়া শিক্ষক ও ফুটবল দলের সদস্যেরা।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভবিষ্যতের ভোটারদের সচেতন করতে স্কুলগুলিতে ‘ইলেক্টরাল লিটারেসি ক্লাব’ তৈরির ভাবনা শুরু ২০১৬ সাল থেকে। দিল্লির নয়ডার একটি স্কুলে ওই ক্লাবের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদি। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সচেতন করতে একই ধরনের উদ্যোগ নিতে চেয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন রাজ্যের বাছাই আধিকারিকদের দিল্লিতে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সেই তালিকায় ছিলেন বীরভূমের ওসি ইলেকশন সৈকত হাজরাও। সৈকতবাবু জানান, শুধু স্কুল নয়, কলেজে কলেজে ইলেক্টরাল লিটারেসি ক্লাব এবং সাধারণ মানুষকে (যাঁদের নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই) সচেতন করতে ‘চুনাও পাঠশালা’ গড়ার কথা বলেছে কমিশন। ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেই লক্ষ্যেই প্রথম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ক্লাবে ভবিষ্যতের ভোটাররা শিখবে, এক জন ভোটার কেন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যোগ দেন, বয়স ১৮ ছুঁলে কী ভাবে ভোটার তালিকায় নাম তোলা যায়, কী ধরনের আবেদনপত্র সে জন্য পূরণ করতে হবে, কমিশনের ভূমিকা কী, ইভিএম এবং ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল কী ভাবে কাজ করে, নৈতিক ভোট দান কী, নোটার ভূমিকা সহ নানা তথ্য। আগামী দিনে তা ভোট প্রক্রিয়াকে আরও সমৃদ্ধ ও নিরপেক্ষ করবে। ক্লাব গঠনের আগে ফুটবল প্রতিযোগিতার দিকে নজর সিউড়ির নির্বাচিত স্কুলগুলির। বিষয়টিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জেলা নির্বাচন দফতরের ফেসবুক ও ইউটিউব-এ খেলার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।