ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। আমেরিকার সেই মামলায় নাম জড়িয়েছে তাঁর ভাইপো সাগর আদানি-সহ আরও ছ’জনের।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ‘আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড’-এর সিইও বিনীত জৈন, ‘আজ়ুরে পাওয়ার’-এর রঞ্জিত গুপ্ত এবং রূপেশ আগরওয়াল। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিক সিরিল ক্যাবানেস, সৌরভ আগরওয়াল এবং দীপক মলহোত্রের নামও তালিকায় রয়েছে।
ঠিক কী অভিযোগ আদানিদের বিরুদ্ধে? অভিযোগ, ভারতের রাজ্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলির সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ চুক্তির বরাত পেতে ভারতের সরকারি কর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন তাঁরা।
আমেরিকার তদন্ত সংস্থার দাবি, আদানি, তাঁর ভাগ্নে সাগর এবং অন্যেরা ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার লাভের আশায় ‘সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসইসিআই)-এর ওই প্রকল্প ‘হাতাতে’ চেয়েছিলেন এবং সেই জন্যই রাজি হয়েছিলেন ২২৩৭ কোটি টাকারও বেশি ঘুষ দিতে।
আর ঘুষের সেই টাকা বিনিয়োগের নামে তোলা হয়েছিল আমেরিকার বাজার থেকে। আর সেই কারণেই ঘুষের মামলার তদন্ত করছে আমেরিকা। উঠে আসছে একের পর এক অভিযোগ।
ফলে আবার বিপাকে আদানিরা। ইতিমধ্যেই শেয়ারবাজারে ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন সংস্থাগুলি। হু-হু করে তাদের শেয়ারের দর পড়ছে। এর আগে যেমনটা হয়েছিল হিন্ডেনবার্গকাণ্ডে।
ভারতের অন্যতম ধনী শিল্পগোষ্ঠী হল আদানি গোষ্ঠী। আদানি এবং তাঁর পরিবারের ব্যাপারে জানা থাকলেও অনেকেই জানেন না তাঁর ভাইপো সাগরের ব্যাপারে। সাগরের নাম ঘুষকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
আদানি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সাগর গৌতম আদানির ভাইপো। বর্তমানে তিনি ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’র এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এবং আদানি গ্রুপের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সাগর পড়াশোনা করেছেন আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে। সেখান থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
২০১৫ সালে আদানি গোষ্ঠীতে যোগ দেন সাগর। প্রাথমিক ভাবে সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্প দেখাশোনার কাজ করতেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে আদানি গ্রিন এনার্জির বিস্তৃত সৌর এবং বায়ু শক্তির পোর্টফোলিয়ো তৈরির কৃতিত্ব নাকি তাঁরই।
বর্তমানে আদানি গ্রিন এনার্জির এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর হিসাবে তিনি সংস্থার কৌশলগত এবং আর্থিক কার্যকলাপ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন। সেই সাগরের বিরুদ্ধেও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার এক জন বিচারক আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আইনজীবীরা সেই পরোয়ানাগুলি বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করেছেন বলেও খবর।
একটি অভিযোগ অনুযায়ী, ঘুষের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ট্র্যাক করার জন্য নিজের ফোন ব্যবহার করেছিলেন সাগর।
গৌতম, সাগর এবং বিনীতের বিরুদ্ধে ‘সিকিউরিটিজ় ফ্রড’, ‘সিকিউরিটিজ় ফ্রড কনস্পিরেসি’ এবং ‘ওয়্যার ফ্রড কনস্পিরেসি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। আমেরিকার ‘সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’-এর দেওয়ানি মামলাতেও আদানিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে খবর।
নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে বলা হয়েছে, ‘‘গৌতম আদানি, সাগর আদানি এবং বিনীত জৈনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। আমেরিকার লগ্নিকারীদের থেকে কোটি কোটি ডলার তোলার জন্য জালিয়াতি করেছেন তাঁরা। তাঁদের সংস্থার তরফে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।’’
গৌতম, সাগর এবং বিনীত ছাড়া অন্য পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আমেরিকার ঘুষ-বিরোধী আইন, ‘ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং চার জনের বিরুদ্ধে বিচারে বাধা দিতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালের মার্চে আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইয়ের তরফে সাগরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরোয়ানা (সার্চ ওয়ারেন্ট) জারি করে। প্রমাণের জন্য তাঁর বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলিও বাজেয়াপ্ত করেছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।