চলছে রাস্তা মেরামতির কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
সক্কাল সক্কাল ফলাহার। তার পর মাছ-মাংস দিয়ে জমিয়ে খাওয়া দুপুরে। উপহার বিনিময়। আয়েশি আড্ডা। প্রতি বছর এ ভাবেই চলত জামাইষষ্ঠী পালন। কিন্তু বুধবার এর ঠিক উল্টো ছবি ধরা পড়ল ময়ূরেশ্বরে। সকাল হতেই কোদাল, দুরমুশ ঘাড়ে করে রাস্তা সারাইয়ে হাত লাগালেন গ্রামের জামাইরা।
জামাইষষ্ঠীতে ইলিশে যখন নুন-হলুদ মাখাতে ব্যস্ত শহরবাসী, ঠিক সেই সময় ময়ূরেশ্বরের ১ নম্বর ব্লকের মল্লারপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোয়ালা গ্রামে এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল। প্রশাসনের অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল অবস্থায় পড়েছিল গ্রামের প্রধান মাটির রাস্তাটি। অল্প বৃষ্টি হলেই হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যেত। খানাখন্দ পেরিয়ে সেখান দিয়ে যাওয়া আসাই দুষ্কর হয়ে উঠেছিল।
জামাইষষ্ঠীতে তাই রাস্তা সারাইকেই উপহার হিসেবে তুলে দেবেন বলে মনস্থির করে ফেলেন গ্রামের জামাইরা। সেই মতো সকাল হতেই কোদাল, শাবল, দুরমুশ কাঁধে নিয়ে কাজে নেমে পড়েন সকলে। তাঁদের মধ্যে এক জন বলেন, ‘‘বছরে একটা দিন শ্বশুরবাড়ি আসা। তাতে যদি রাস্তা ঠিক করতে সহযোগিতা করতে পারি, সে তো ভালই। আমাদের দেখে আরও অনেকে এগিয়ে আসায় ভাল লেগেছে।’’
গ্রামবাসীদের দাবি, একাধিক বার রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েও সুরাহা হয়নি। ভোটের সময় নেতা-মন্ত্রীরা এসে ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট মিটে গেলেও, রাস্তার হাল ফেরেনি।
বর্তমানে মল্লারপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত বিজেপি-র দখলে। রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে, জেলার উপর দায় চাপিয়ে দেয় তারা। উপপ্রধান সমীর লাহা বলেন, ‘‘রাস্তা সারাইয়ের দায়িত্ব জেলা পরিষদের। মাটির রাস্তাটি দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। এত লম্বা রাস্তার সারাই পঞ্চায়েত করতে পারে না।’’
কিন্তু উপপঞ্চায়েতের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন জেলা পরিষদের কো মেন্টর ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর ধরে রাস্তা সারাইয়ের টাকা খরচ করেনি পঞ্চায়েত। কাই এই অবস্থা। আর এটা পঞ্চায়েতের রাস্তা। যিনি জেলা পরিষদের ঘাড়ে দোষ ঠেলেছেন, তিনি মূর্খের মতো কথা হলেছে।’’