জনসংযোগে গিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের নানা অভিযোগ শুনতে হল তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। বৃহস্পতিবার নলহাটি ২ ব্লকে ওই কর্মসূচির পর শতাব্দী অবশ্য বলেন, ‘‘বাসিন্দারা সাংসদকে সমস্যার কথা বলবেন এটাই তো স্বাভাবিক।’’ এর আগে দিদির দূত কর্মসূচিতেও একাধিকবার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল শতাব্দীকে।
এ দিন নলহাটি ২ ব্লকের কাটাগড়িয়া, হাজরাপুর, নবগ্রাম, নগড়ার মতো বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজনের সমস্যার কথা শোনেন সাংসদ। কোথাও পায়ে হেঁটে আবার কোথাও টোটোয় চেপে ঘোরেন শতাব্দী। অধিকাংশ জায়গায় সাংসদকে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাস্তা, পানীয় জল, আবাস যোজনার ঘর-সহ সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন ভাতা নিয়ে অভিযোগ-অনুযোগ করতে দেখা যায়।
এলাকাবাসীর একাংশ সাংসদকে জানান, কাটাগড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় রাস্তার দরকার। তাঁদের অভিযোগ, বেহাল রাস্তার বিষয়ে বহু বার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, হাজারপুর গ্রামের বেশ কয়েক জন বার্ধক্য ভাতা ও লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। পঞ্চায়েতের বসানো অধিকাংশ নলকূপ বেহাল বলেও অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আলি সাংসদকে বলেন, ‘‘৭৮ বছর বয়স হয়ে গেলেও আমি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছি না। পঞ্চায়েত, ব্লক ও দুয়ারে সরকারে বহু বার অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু, ভাতা পাইনি।’’ এ কথা শুনে শতাব্দী তাঁর নাম ডায়েরিতে লিখে নিতে বলেন। তিনি বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
অন্য দিকে রেখা মাল, অণু মালেরা সাংসদকে কাছে পেয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছি না। কেন পাচ্ছি না সে বিষয়েও প্রশাসনের কাছে কোনও সদুত্তর পাচ্ছি না।’’ সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন শতাব্দী।
সাংসদের জনসংযোগ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, নলহাটি ২ ব্লকের পাশের ব্লক মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি। সেখানে উপনির্বাচনে তৃণমূল হেরেছে। তার পরে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করতে শুরু করেছেন। তাই সাংসদের এই জনসংযোগ।
হাঁসনের প্রাক্তন বিধায়ক ও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেস ভাল ফল করবে। সাগরদিঘিতে হারের পরে এই ব্লকের অনেকে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করতে শুরু করেছেন।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘জনসংযোগ করে কোনও লাভ নেই। কয়েক দিন পরে দলে এক জন কর্মী থাকবেন কি না সন্দেহ আছে।’’
নলহাটি ২ ব্লকের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল নেতা আবুজাহের রানা বলেন, ‘‘কয়েক জন সমস্যার কথা বললেও উন্নয়ন সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বিরোধীরা ভোটের আগে পরিযায়ীদের মতো আসে। ভোট শেষে দেখা যায় না।’’ শতাব্দী বলেন, ‘‘অসন্তোষ বলে কিছু নেই। মানুষজনের অভাব, অভিযোগ শুনতেই গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি। বেশ কয়েক জনের সমস্যার কথা শুনেছি। সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তৃণমূলের যে সংগঠন আছে, তাতে বিরোধীরা কিছুই করতে পারবে না।’’