পুরযুদ্ধ
West Bengal Municipal Election 2020

পর্যটনের শহরে পথেই আবর্জনা

ঘটনা হল, গত ক’বছর ধরে আবর্জনা সাফাই-ই বিষ্ণুপুর পুরসভার বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। যা এ বার পুরভোটের প্রচারে বিরোধীদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৩
Share:

আস্তাকুঁড়: বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অবস্থা এমনই। নিজস্ব চিত্র

এত দিনেও আবর্জনা ফেলার জায়গা খুঁজে পেল না পুরসভা? চার পাশে নোংরা পড়ে থাকতে দেখে বিরক্ত বিষ্ণুপুরবাসীর এই মনের কথাই ক’দিন আগে বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-এর জমি না পাওয়ার সমস্যা নিয়ে সে দিন পুরসভা বা জেলা প্রশাসনের কোনও ওজর-আপত্তিকে আমল দেননি মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিয়েছেন, অতি দ্রুত জমির ব্যবস্থা করতে হবে।

Advertisement

ঘটনা হল, গত ক’বছর ধরে আবর্জনা সাফাই-ই বিষ্ণুপুর পুরসভার বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। যা এ বার পুরভোটের প্রচারে বিরোধীদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সে কথা মাথায় রেখে ভোটের আগেই সে জট কাটাতে জোর দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

রাসমঞ্চের কাছে, যদুভট্ট মঞ্চের পাশে, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের সামনে থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কের পাশে— স্তূপীকৃত ময়লা। কোথাও কোথাও ডাস্টবিন উপচে পড়ছে জঞ্জাল। কাক ও কুকুরে টানাটানি করে জঞ্জাল টেনে আনছে রাস্তায়। শহরের ২, ৩, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমস্যা সব থেকে বেশি বলে অভিযোগ। শুধু শহরেই নয়, লাগোয়া চৌকানের জঙ্গলে, শিরোমণিপুর যাওয়ার পথে জঙ্গলেও ছড়িয়ে থাকছে নোংরা। এই পরিবেশ দূষণ নিয়ে ক্ষোভ জমেছে মন্দির-নগরীতে। পুরসভার দাবি, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনার জন্য টাকা আছে, কিন্তু ময়লা ফেলার জমি নেই।

Advertisement

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাপরমাঠ এলাকার বাসিন্দা ছায়া নিয়োগী থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবারুণ সঙ্ঘের সম্পাদক প্রসেনজিৎ কাপড়ির বক্তব্য, ‘‘আবর্জনা জমতে জমতে নিকাশি নালা ভরে যাচ্ছে। নিয়মিত সাফাই হয় না বলেই এই সমস্যা।’’

বিষ্ণুপুরে মল্লরাজাদের তৈরি মন্দির দেখতে প্রায় বছরভর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু পথেঘাটে আবর্জনা পড়ে থাকায় অনেকেই নাক কোঁচকান। এতে শহরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে— প্রশ্ন ছুড়ছেন পুরবাসী। আবর্জনা ফেলব কোথায়— পাল্টা প্রশ্ন বিষ্ণুপুর পুরসভার টানা ছ’বারের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই। চৌকানে ফাঁকা জায়গায় আবর্জনা ফেলতে গেলে বন সুরক্ষা কমিটি বাধা দিচ্ছে। বিষ্ণুপুর বাইপাসেও ফেলতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধা পেয়েছেন পুর-কর্মীরা। লুকিয়ে চুরিয়ে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। কিন্তু নানা জায়গা থেকে প্রতিরোধ আসছে।’’

বিষ্ণুপুরের এক মাত্র বিজেপি কাউন্সিলর দেবপ্রিয় বিশ্বাসের দাবি, ‘‘কয়েকশো বিঘা খাস জমি ছিল বিষ্ণুপুর পুরসভার। সে সব কোথায় গেল? আমরা নিশ্চিত, অধিকাংশ খাস জমিই বিক্রি করা হয়েছে। পুর-এলাকায় ন’টি ভাগাড় ছিল। সে সবের কী হল?’’ একই সুরে বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষও দাবি করেন, ‘‘আবর্জনা ফেলার জমি কোথায় গেল, পুরসভা জবাব দিক।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের একটি ফাঁকা জায়গার প্রস্তাব সরকারি ভাবে পাঠানো হলেও সীমানা প্রাচীর দেওয়ার নির্দেশ আসেনি। যদিও ওই জায়গায় ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ করা যাবে না বলে আগেই আন্দোলনে নেমেছিলেন এলাকাবাসী। ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সঞ্জয় নন্দী বলেন, “বনমালীপুর এলাকায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা যাবে না বলে স্থানীয়েরা গণস্বাক্ষর করে আবেদন জমা দিয়েছেন। জেলা পরিষদে তা জানিয়েছি।’’ ইদানিং শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে লালবাঁধ লাগোয়া শিরোমণিপুরে। লালবাঁধের সৌন্দর্যায়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরেও কেন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে? লালবাঁধে নৌকাবিহার করতে গিয়ে বর্ধমানের শালবাগানের বাসিন্দা দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাঁধের পাড়ে এত আবর্জনা কেন?’’ মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডলের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই পুরসভার আবর্জনা সাফাই নিয়ে কী করা যায়, দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement