পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ । নিজস্ব চিত্র
মাধ্যমিক হোক বা উচ্চ মাধ্যমিক, পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের পড়ুয়ারা বরাবর নজর কাড়ে। তবে, এ বারে মাধ্যমিকে মেধা-তালিকায় থাকা জেলার সকলেই বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া। এমন ফলে উচ্ছ্বসিত স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষকেরা।
বিদ্যাপীঠ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২-এ মাধ্যমিকে মেধা-তালিকায় বিদ্যাপীঠের ৯ কৃতীর ঠাঁই মিলেছিল। ১৯৯৩-তেও ছিল সাত জন। বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ জানান, তার আগে, ১৯৯০-এ মেধা-তালিকায় রাজ্যে প্রথম স্থান পেয়েছিল বিদ্যাপীঠেরই পড়ুয়া। সামগ্রিক ভাবে তালিকার ১২ জনের মধ্যে ৯ জন ছিল বিদ্যাপীঠের। দীর্ঘ তিন দশক পরে, আবারও মেধা-তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বিদ্যাপীঠের ৬ পড়ুয়া। পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে তারা।
বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী জ্ঞানরূপানন্দের কথায়, “নব্বইয়ের দশকের পরে বিদ্যাপীঠ এই সাফল্য পেয়েছে। ঠাকুর, মা ও স্বামীজির আদর্শ, দিবারাত্র পরিশ্রম এবং সকলের ঐকান্তিক চেষ্টাতেই তা সম্ভব হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “স্বামী বিবেকানন্দ যে ভাবে মানুষ তৈরি ও চরিত্র গঠনের উপরে জোর দিয়েছেন, শিক্ষাদানকে আমরা সে ভাবেই গ্রহণ করি। এ বারে ৯৮ জনের মধ্যে ৯৮ জনই কৃতকার্য হয়েছে। তাদের গড় নম্বর ৯৪.১৬ শতাংশ।”
স্কুলের কৃতী শুভজিৎ দে, সৌম্যদীপ নায়কেরা জানায়, বিদ্যাপীঠের পরিবেশ পড়াশোনায় ভীষণ সহায়তা করেছে। বিদ্যাপীঠের আশ্রমিক পরিবেশ পড়ুয়াদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলে। স্বামী শিবপ্রদানন্দও বলেন, “পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ সমস্ত কাজকেই পূজা হিসেবে গ্রহণ করে। বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, সন্ন্যাসী, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রবৃন্দ, সকলেই এই কাজে এক যোগে শামিল হন।”
এ দিকে, জেলায় ১৩ জন কৃতীর মধ্যে ছ’জনই বাঁকুড়ার পোয়াবাগান এলাকার বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের। এর আগেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মেধা-তালিকার প্রথম সারিতে এসে চমক দিয়েছে স্কুলের পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপনকুমার পতি জানান, স্কুলের ১৬৯ জন পড়ুয়া এ বারে মাধ্যমিকে বসেছিল। সকলেই কৃতকার্য হয়েছে। স্কুলের ধারাবাহিক এই সাফল্যের জন্য নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষাপদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “পড়ুয়াদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা, তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা, পড়ুয়াদের উত্তরপত্রের মানোন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া, ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার দিকে স্কুল বিশেষ নজর দেয়। স্কুলের নিজস্ব ছুটির বাইরে বাড়তি ছুটি দেওয়া হয় না।” তিনি আরও জানান, বছরে ২২০ দিন স্কুল করা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি পড়ুয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ। যারা তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে থাকে, তাদের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
বাঁকুড়ার মিশন গার্লস হাই স্কুল থেকেও এ বারে তিন জন মেধা-তালিকায় জায়গা পেয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অবিজিতা চৌধুরী বলেন, “পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি ছাত্রীদের মানোন্নয়নে সহায়ক বই পড়ার দিকেও আমরা জোর দিই। তাতে ওদের অনেক সুবিধা হয়।”