দফতরে জমায়েত। নিজস্ব চিত্র
বরাদ্দের তুলনায় রেশন কম চাল ও গম দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমার রেশন ডিলারদের একাংশ। সোমবার তাঁরা মহকুমা খাদ্য নিয়ামক (বিষ্ণুপুর) কার্যালয়ে হাজির হয়ে বিক্ষোভ দেখান।
বিক্ষুব্ধ ডিলারদের দাবি, সরকার ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১’ ‘স্কিম’-এ কার্ড পিছু চাল ও গমের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকেরা সে কথা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। ফলে, সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ডিলারদের। এমনকি, গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে। ডিলারদের প্রশ্ন, বরাদ্দ কম করার দায় কেন তাঁদের উপরে এসে পড়বে। জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় বলেন, ‘‘কোনও ঘাটতি হলে, তা পরে মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই উপভোক্তাদের কম দেওয়া যাবে না।’’
রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি, কয়েক ধরনের রেশন কার্ডে (অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার, বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার ও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২) খাদ্যসামগ্রী বিলি নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ কার্ড এবং কুপনে বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী বিলিতে।
রেশন ডিলারদের সংগঠন এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের বিষ্ণুপুর শাখার পক্ষে মৃত্যুঞ্জয় সেন দাবি করেন, “রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ ‘স্কিম’-এ কার্ড পিছু ৮২০ গ্রাম চাল এবং ১,২৩০ গ্রাম গম (প্রতি ১৫ দিনে) বিলি করতে মৌখিক ভাবে মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের কার্যালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে। এর কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। কিন্তু কার্ড পিছু বরাদ্দ হওয়ার কথা ১ কেজি চাল ও দেড় কেজি গম। রেশন কার্ড ‘ই-পিওএস’ মেশিনে ‘সোয়াইপ’ করলে মেশিনের পর্দায় গ্রাহকদের সামনে সে তথ্য ফুটে উঠছে।’’ মহকুমা খাদ্য মিয়ামকের কার্যালয় থেকে রেশন ডিলারদের দেওয়া ‘মৌখিক নির্দেশ’ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, ‘‘সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে সমস্যা থাকলে, শীঘ্র সমাধান হয়ে যাবে।’’
সমস্যাটা কোথায়?
মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘গ্রাহকেরা মনে করছেন, আমরা তাঁদের চাল ও গম কম দিচ্ছি। তাঁরা এটা বুঝতে চাইছেন না যে, সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে বরাদ্দ কমিয়েছে। চাল-ডাল কম পাওয়ার জন্য গ্রাহকেরা আমাদের দায়ি করছেন।’’ রেশন ডিলারদের আশঙ্কা, এই নিয়ে বিভ্রান্তি না কাটলে যে কোনও সময় গ্রাহকেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করবেন। কিছু একটা হয়ে গেলে তার দায় এসে পড়বে রেশন ডিলারদের উপরে।
মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘গ্রাহকদের দাবি অনুয়ায়ী চাল-গম দেওয়া সম্ভব নয়। তাই খাদ্য দফতরের কাছে আমাদের অনুরোধ, যা বরাদ্দ হয়েছে, সেই অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী বিলির লিখিত নির্দেশ দেওয়া হোক। না হলে গ্রাহকদের সঙ্গে ডিলারদের ভুল বোঝাবুঝি থেকেই যাবে ।”
অভিযোগ প্রসঙ্গে মহকুমা খাদ্য নিয়ামক (বিষ্ণুপুর) দেবজ্যোতি তালুকদার বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে ডিলারদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।’’ যদিও দফতরের আধিকারিকদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, করোনা-পরিস্থিতিতে গণবণ্টন ব্যবস্থার উপরে নজিরবিহীন চাপ তৈরি হয়েছে। বাড়তি খাদ্যসামগ্রী জোগাতে সরকারকে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। রেশনে চাল-গমের ঘাটতি রয়েছে। সে কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
এ দিকে, হাতে রেশন কার্ড থাকলেও খাদ্য দফতরের ‘পোর্টাল’-এ নাম না ওঠায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিষ্ণুপুরের বহু উপভোক্তা রেশন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। দেবজ্যোতিবাবু বলেন, ‘‘সাড়ে আট হাজার গ্রাহকের তথ্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তাঁদের রেশন কার্ড আছে। তবে সে তথ্য ‘পোর্টাল’-এ আপলোড না হওয়ায় তাঁরা রেশন পাচ্ছেন না। মে মাসে তাঁদের কার্ড ‘পোর্টাল’-এ সক্রিয় হওয়ার কথা।’’