সচল: বিষ্ণুপুর ব্লকের গোঁসাইপুর গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে একটি ভাটায় দূরত্ব বজায় রেখে শুরু হল ইট তৈরি। সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
যে এলাকাগুলি ‘হটস্পট’ বা ‘ক্লাস্টার’ নয়, সেখানে আংশিক ভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু করা যাবে বলে রবিবার নির্দেশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সোমবার থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় কিছু ক্ষেত্রে কাজকর্ম শুরু হয়েছে। তবে সংক্রমণের সম্ভাবনা এড়াতে কম শ্রমিক নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই চিন্তায় পড়েছেন অনেক শ্রমিক।
‘লকডাউন’-এ কারখানা বন্ধ। কর্মহীন হয়ে বাড়িতেই বসে রয়েছেন বহু শ্রমিক। হাতে থাকা টাকা পয়সাও অনেকেরই ফুরিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে কারখানা খুললেও সবাই কাজ পাবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছে। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঠিকা শ্রমিক লাবু বাগদি বলেন, “রাজ্য সরকারের নির্দেশে কারখানা খোলা হলেও শুনছি সপ্তাহে এক বা দু’দিন কাজ পাব। হাতে টাকা নেই। পুরোদমে কাজ শুরু না হলে সমস্যা মিটবে না।”
বড়জোড়ার একটি স্পঞ্জ-আয়রন কারখানার শ্রমিক দুলাল বাউরি বলেন, “কারখানার কাজ বন্ধ। কারও চাষ জমিতে গিয়ে কাজ করব, সেই সুযোগও পাইনি। এ বার কারখানা খুলবে শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। তবে, কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ হলে সবাই কাজ পাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর (শিল্প) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “শ্রমিকদের সমস্যাগুলি আমাদের নজরে আছে। সমস্ত কারখানার মালিককে আবেদন করেছি, শ্রমিকেরা যাতে সমান কাজ পান সেই মতো করে ‘রোস্টার’ বানাতে।’’ পাশাপাশি, নিজেদের সাধ্যমতো শ্রমিকদের সুবিধা দেওয়ার আবেদনও তাঁর মালিকপক্ষের কাছে করেছেন বলে জানান প্রবীরবাবু।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩০টিতে সোমবার থেকে একশো দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ শুরুর ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া-সহ কিছু ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। মূলত, তেমনই কিছু পদ্ধতিগত সমস্যার জন্য জেলার ৩০টি পঞ্চায়েত এ দিন থেকে কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে প্রশাসনের দাবি, আজ, মঙ্গলবার থেকে বাকি পঞ্চায়েতগুলিতেও কাজ শুরু হবে।
বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, সোমবার থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মূলত ‘হাপা’ (ছোট পুকুর) খনন, সামাজিক বনসৃজন ও বাংলা আবাস যোজনার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, ‘হাপা’ খনন ছোট কাজ। খুব বেশি শ্রমিককে নিয়োগ করা হয় না। ফলে, দূরত্ব বজায় রাখতে সুবিধা হবে। আবাস যোজনার কাজের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। এই প্রকল্পে অনেক ক্ষেত্রেই উপভোক্তার পরিবারের কয়েকজন কাজ করে নেন। বনসৃজনের কাজও দূরে দূরে থেকে করা সম্ভব।
সোমবার ঝালদা ১ ব্লকে গিয়ে একশো দিনের কাজ পরিদর্শন করেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। দুপুরে তিনি গিয়েছিলেন ইচাগ পঞ্চায়েতের কেন্দুয়াডি গ্রামে। সেখানে ‘হাপা’ খোঁড়ার কাজ করছিলেন সাত জন শ্রমিক। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা ও মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেন জেলাশাসক। শ্রমিকদের মধ্যে ঊষারানি মাহাতো বলেন, ‘‘মাঝে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকার টানাটানি শুরু হয়েছিল। এ বার সেটা মিটবে বলে আশা করছি।’’