মুরারই ১ ব্লক অফিসের সামনে এমনই লাইন পড়ে সোমবার। ছবি: তন্ময় দত্ত
সকাল থেকেই ব্লক অফিসের সামনে লাইন পড়েছিল। সময় গড়াতে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। মানা হচ্ছিল না দূরত্ব-বিধিও। শেষ পর্যন্ত, বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাজ্য সরকারের ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এল জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে সোমবার সকাল থেকেই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ভিড় জমতে শুরু করে জেলার বিভিন্ন ব্লক অফিসে। বিভিন্ন ব্লক পরিস্থিতি আগাম আঁচ করে কিছু ব্যবস্থা রেখেছিল। তবে, এত সংখ্যক মানুষ আবেদনপত্র জমা দিতে এলে কী ভাবে একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে, এমন প্রশ্ন নিয়ে চর্চা শুরু যায়। তবে, তার মধ্যেই জেলাশাসকের তরফে সব বিডিও-র কাছে বার্তা পৌঁছয়— পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কাজ স্থগিত থাকবে। এর পরেই লাইনে থাকা মানুষজনকে বুঝিয়ে বাড়ি যেতে বলা হয়। ঝামেলাও হয়নি।
ব্যতিক্রম মুরারই ১ ব্লক। ওই ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের নির্দেশ আসার আগেই সকাল থেকে নে। প্রমাদ গুনতে থাকে প্রশাসন। ভিড় এড়াতে হাজারেরও বেশি আবেদনপত্র জমা নেন বিডিও নিশীথভাস্কর পাল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক গাইডলাইন মেনে আবেদনপত্র পূরণ করার কথা। যেহেতেু এত মানুষ এসেছিলেন তাই ভিড় কমাতেই আবেদন জমা নিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’
করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। এর ফলে অসংগঠিত দিনমজুর বা শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। যাঁদের অন্য কোনও উপার্জনের পথ নেই, সরকারি আর অন্য কোনও সামাজিক পেনশন প্রকল্পে নাম নেই— অসংগঠিত ক্ষেত্রের এমন শ্রমিকদের এই সঙ্কটে সাহায্য করার জন্য রাজ্য সরকার ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্প চালু করেছে। প্রকল্পের আওতায় আসা উপভোক্তারা এককালীন ১০০০ টাকা ভাতা হিসেবে পাবেন।
সেই আবদেনপত্র জমা নেওয়ার কথা ছিল জেলাশাসক, ব্লক অফিসের মারফত। কিন্তু ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রেশন দোকানের লাইনের মতোই আবেদনপত্র জমা দিতে প্রচুর সংখ্যায় মানুষ সরকারি দফতরে ব্যক্তিগত ভাবে নাম লেখাতে গেলে দূরত্বের নীতি লঙ্ঘিত হতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিরোধীরা। আশঙ্কায় ভূগছিলেন সরকারি আধিকারিকেরাও। সোমবার থেকেই আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে, এই খবর ছড়াতে ছবিটা কী হতে পারে— সেটা দেখাল মুরারই। রাজ্যের আরও নানা এলাকায় একই ছবি। তার পরেই রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে জেলাশাসকেরা ব্লকে ব্লকে আবেদন জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।
জেলার বিডিওরা আড়ালে বলছেন, ‘‘কত মানুষ জমা দেবেন, সেটা কি আন্দাজ করা যায়? আবেদনপত্র অনেকেই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে জমা দিতে এসেছিলেন। ভিন্ন ভাবনা না নিলে দূরত্বের নীতি বজায় রাখা কঠিন
কাজ হবে।’’