প্রতীকী ছবি
‘— তবু এখনও পথ খোলা আছে ভাইরে/ হাত জোড় করি ভাইরে/ ঘরে থাক, শুধু ঘরে বসে থাক/ আর কোন পথ নাই রে।’
করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতার বার্তাবাহী ওই আবৃত্তিটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি মানুষের কাছে বিনোদনের উপকরণও হয়ে উঠেছে কবিতার ভিডিওটি।
কবিতাটি লিখেছেন সাংস্কৃতিক কর্মী অতনু বর্মন। পাঠও করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে দেড়লক্ষ মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। শেয়ার হয়েছে ১০ হাজার। বর্ধমানের রাজুরের বিভোর আচার্য, নানুরের সুখেন মণ্ডলেরা জানান, অতনুবাবুর ওই ভিডিও শুধু সচেতনতার বার্তাবাহীই নয়, ঘরবন্দি অবস্থায় বিনোদনের মাধ্যমও হয়ে উঠেছে।
আর অতনুবাবুর কথায়, ‘‘দেশে তথা সারা বিশ্বে এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নাগরিক হিসেবে যুদ্ধে সবারই কিছু না কিছু করণীয় থাকে। সেই বোধ থেকে করনা ভাইরাস সংক্রামণ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দিতেই আমার এই প্রয়াস।’’
অতনুবাবুর মতোই কেউ লিখেছেন গান, কেউ লিখেছেন কবিতা। কেউ আবার দিয়েছেন সচেতনতার বার্তা। সেইসব প্রয়াস এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। জেলা পুলিশ প্রশাসনও তৈরি করেছে একই ধরনের ভিডিও। সচেতনতার বার্তাবাহী অভিনব ভিডিওটি তৈরি করেছে লাভপুরের বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনি। লকডাউন-এর কারণে ওই নাট্য সংস্থার সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের বাড়িতে গৃহবন্দি রয়েছেন। সেখান থেকেই তাঁরা নিজেদের মধ্যে একাত্মতা রক্ষা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কিছু করার তাগিদ অনুভব করে। ফোনে ফোনে ঠিক হয়ে যায় ঘরে থাকার জন্য সচেতনতার বার্তাবাহী গানের ভিডিও তৈরি করা হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
বাইরে বেরনোয় বাধা। তাই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে লাভপুরের নবগ্রামে বাড়িতে বসে প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী লিখে ফেলেন গান। হোয়াটসঅ্যাপে সেই গান চলে যায় ধনডাঙার কার্তিক দাস বাউলের কাছে। তিনি সুর তৈরির করে মুখড়াটুকু গেয়ে পাঠিয়ে দেন সংস্থার কর্ণধার উজ্বল মুখোপাধ্যায়ের হোয়াটসঅ্যাপে। সেই গানে যার যা ভূমিকা তা পালন করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্যান্য সদস্যদের কাছে। সেইমতো নিজের বাড়িতে বসেই লাভপুরে সাহাপাড়ার সম্রাট সাহা এস্রাজ, তারামাডাঙার সন্তোষ রায় বাঁশি, বাবুপাড়ার কাজল মুখোপাধ্যায় ঢোল, মস্তলির সৌম্য কর্মকার তবলা বাজান। সিউড়ির শ্বশুরবাড়ি থেকে গলা মেলান অন্বেষা ঘোষ, বিরামমন্দিরের জহর দাস, চুমকি দাস, রূপম দাস, স্টেশনপাড়ার রূপা সূতার, হর্ষিতা ঘোষ, সিউড়ের কৌশিক রায় প্রমুখ। ভাষ্যপাঠ করেন সংস্থার কর্ণধার উজ্বল মুখোপাধ্যায়। নিজের নিজের অংশটুকু ভিডিও রেকর্ডিং করে পাঠিয়ে দেন সংস্থার অন্যতম কর্মী তূর্য সিংহের মোবাইলে। তারই সম্পাদনায় তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও। সেই ভিডিওটিও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভিডিওর গান ‘শোন শোন ভারতবাসী শোন দিয়া মন/ ঘরে বসে লড়াই করো ভাইরাসের কারণ’ এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। আমোদপুরের সজল চট্টোপাধ্যায়, কুন্ডলার সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা জানান, বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর অভিনব ভিডিও সামাজিক বার্তাবাহী। উজ্বলবাবু বলেন, ‘‘গৃহবন্দি থাকার দিনগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকেও যে সমাজের জন্য কিছু করতে পারি সেই চেষ্টারই ফসল আমাদের এই ভিডিও।’’