অ্যাপের প্রতীক। নিজস্ব চিত্র
ই-গভর্নেন্সের উদ্দেশ্য সরকারি দফতরের কাজকর্ম ‘কাগজহীন’ করা। সরকারের বক্তব্য, তা স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতাও সুনিশ্চিত করে। এ বার রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প তৈরিতেও সেই পথে এগোচ্ছে প্রশাসন।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য এমজিএনআরইজিএ সেলের নির্দেশে ১০০ দিনের কাজের পূর্নাঙ্গ পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হবে ‘সিকিওর’ (সফ্টওয়্যার ফর এস্টিমেট ক্যালকুলেশন ফর ইউজিং রুরাল রেটস ফর এমপ্লয়মেন্ট) নামে একটি ‘ওয়েব বেসড অ্যাপলিকেশন’-এর মাধ্যমে। জুন-জুলাই মাসে এ বিষয়ে জেলাতেও প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতর নির্মাণ সহায়কদের দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এক মাস ধরে বীরভূমে ১০০ দিনের কাজের সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়েছে ‘সিকিওর’-এর মাধ্যমেই।
জেলা প্রশাসনের কর্তা এবং নির্মাণ সহায়কদের একাংশের বক্তব্য, ওই অ্যাপ-এর মাধ্যমে প্রকল্পের খুঁটিনাটি তৈরি করা হলে কাজে গতি আসবে। যে হেতু পুরোটাই অনলাইন প্রক্রিয়া, তাই অনুমোদন পেতে সমস্যা হবে না।
কী ভাবে কাজ করছে ওই অ্যাপলিকেশন?
জেলা প্রশাসন ও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে কাজের পরিকল্পনা করা হয়। আবেদনের ভিত্তিতে জবকার্ডধারীদের সেই কাজে যুক্ত করা হয়। তবে প্রথমে কাজের পরিকল্পনা তুলতে হয় এমজিএনআরইজিএ সফ্টওয়্যারে। তার পরে সেই পরিকল্পনা কী ভাবে রূপায়িত করা হবে, তার টাকা খরচের পরিমাণ, মাস্টাররোল তৈরি, কত কর্মদিবস ও কতজন জবকার্ডধারী কাজ পাবেন— সে সব ঠিক হয়। এত দিন এ সবই করা হতো কাগজে-কলমে। এ বার সেই কাজই করা হবে ‘সিকিউর’-এ।
ওই প্রক্রিয়ার সুবিধা কী?
জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও নির্মাণ সহায়কেরা জানান, ১০০ দিনের প্রকল্পে চিহ্নিত কাজগুলির জন্য একটি ‘কোড’ রয়েছে। ধরা যাক, কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় গাছ লাগানো হবে। সেই নির্দিষ্ট ‘কোড’ ধরে কত সংখ্যক গাছ লাগানো হবে লেখা হলেই মাটিতে গর্ত করা, গাছ লাগানো, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আগাছা পরিষ্কার, খরচ, কর্মদিবস, জবকার্ডধারীর সংখ্যা এক মুহূর্তে জানা যাবে। ওই হিসেব কাগজে করতে ঘন্টাখানেক সময় লাগত, তা-ই এখন হবে ১০ মিনিটে। আগে এ সবের হিসেব কষে ব্লক বা জেলায় যেতে হতো নির্মাণ সহায়কদের। এখন অনলাইনে সব তথ্য পাঠালেই চলবে। প্রয়োজনে নির্মাণ সহায়কেরা বাড়িতে বসেও সেই কাজ করতে পারবেন।
তবে ‘সিকিওর’ অ্যাপের এ সব ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নেতিবাচক দিক নিয়েও কথা উঠছে। নির্মাণ সহায়কদের অনেকেরই বক্তব্য, ওই অ্যাপলিকেশন এখনও যথেষ্ট ‘আপডেটেড’ নয়। ফলে ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে যত ধরনের পরিকল্পনা করা যায়, তা এই মুহূর্তে হচ্ছে না। বিশেষ করে কংক্রিটের কাজ। সে কারণে এখন মাটি কাটা বা গাছ লাগানোর মতো পরিকল্পনার বাইরে এগোনো যাচ্ছে না। আরও একটি সমস্যা হল, কম্পিউটারে অদক্ষ কয়েক জন নির্মাণ সহায়কের ক্ষেত্রে ওই কাজে দক্ষ হতে সময় লাগছে, অসুবিধাও হচ্ছে। ফলে সব গ্রাম পঞ্চায়েত সমান হারে কাজ এগোতে পারবে না।
এমজিএনআরইজি-এর জেলা নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এখন ১০০ দিনের কাজের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে সিকিওর-এই। অন্য রাস্তা নেই। প্রাথমিক কিছু সমস্যা রয়েছে। তাড়াতাড়ি সে সব মিটবে। প্রতি দিনই আপডেট করা হচ্ছে ওই অ্যাপ।
কম্পিউটারে অদক্ষ নির্মাণ সহায়কদের একটি কম্পিউটার কোর্স করানোরও ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন।’’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে কেরলের এমজিএনআরইজিএ কমিশন ও ন্যাশনাল ইমফরমেটিক্স সেন্টার ‘সিকিওর’ নামে ওই অ্যাপলিকেশনটি তৈরি করে। সে বছর থেকে কেরলে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে তা ব্যবহার হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের জুনে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সামনে ওই অ্যাপ-এর বিরবণ দেওয়া হয়েছিল। তার পরে এ নিয়ে সর্বভারতীয় কর্মশালা হয় কেরলে। দেশের ২১টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেন। ঠিক হয়, গোটা দেশেই সেটি চালু করা হবে। তবে প্রতিটি রাজ্যভিত্তিক সফ্টওয়্যার তৈরি হবে। সে সব ঠিক করেই এ বার গোটা রাজ্যেই তার ব্যবহার শুরু হয়েছে।