কৃতী অর্পিতা। নিজস্ব চিত্র
চার বোন। একই স্কুলের ছাত্রী। প্রথম দুই বোন ২০১৭ আর ’১৮ সালে এই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছিলেন। সেজো জনও এ বছর ঠিক সেটাই করে দেখালেন।
বাবা কেয়ারটেকারের কাজ করেন। অনটন নিত্যসঙ্গী। এই বাধা টপকে দুই দিদির মতো অর্পিতা দাসও বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয় থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেয়েছেন। ৪৫০ তিনিই স্কুলে প্রথম হয়েছেন। অর্পিতার এই সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার, প্রতিবেশী ও স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা। বড় হয়ে স্কুল বা কলেজে পড়ানোর স্বপ্ন দেখেন অর্পিতা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্পিতাদের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের গঙ্গারামপুর গ্রামে। বাবা সদানন্দ দাস, মা কবিতা দাসের চার মেয়ে। অর্পিতা সেজো। কাজের সূত্রে গত ১৫ বছর আগে পরিবারকে নিয়ে বোলপুরে চলে আসেন সদানন্দ। এর পরে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের কাজে যোগদান তিনি। তখন থেকেই পরিবারকে নিয়ে ওই বাড়িরই এক পাশে থাকা শুরু করেন তিনি।
সদানন্দের সামান্য রোজগারেই চলে অর্পিতাদের সংসার। অর্পিতার আগে তাঁর দুই দিদি মৌমিতা ও সুস্মিতাও বোলপুর শিক্ষা নিকেতন আশ্রম বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। ছোট জন নবনীতা এই স্কুলেরই জুনিয়র শাখার ছাত্রী (আশ্রম কন্যা বিদ্যালয়)। ফলে, ভাল ফল করার জন্য তাঁর উপরে যে চাপ ছিল, সেটা মানছেন অর্পিতা। তাঁর কথায়, ‘‘দুই দিদি স্কুল থেকে প্রথম একটা চাপ ছিল। বাড়ির লোকেরও প্রত্যাশা ছিল। তবে ভাবিনি এতো ভাল ফল হবে!’’ অর্পিতার সংযোজন, ‘‘কষ্ট করেই পড়াশোনা করেছি। বড় হয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চাই। জানি না কতদূর কী করতে পারব। তবে আমার এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও আমার বাবা-মায়ের।’’
সদানন্দ বলেন, “মেয়েদের সব আবদার পূরণ করতে পারি না। মেয়েদের এই সাফল্যে আমি গর্বিত।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার দাস বলেন, ‘‘অভাবকে দূরে সরিয়ে যে ভাবে ওরা লড়াই করে সাফল্য পেয়েছে, তা নজির সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে আমরা ওদের পড়াশোনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।”