আবারও ‘স্থায়িত্বের’ পথে বিশ্বভারতী।
প্রায় আড়াই বছর ধরে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত চিঠি। যাতে লেখা ছিল, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম মনোনীত করেছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেও এ কথা জানিয়ে দেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি, সাত-দশ দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎবাবু স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে যোগদান করবেন। আমরা তাঁর অপেক্ষায় আছি।’’
এত দিন পরে স্থায়ী উপাচার্য পাওয়ার সংবাদে স্বস্তি ফিরেছে বিশ্বভারতীতে। সুশান্ত দত্তগুপ্তই বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য, যাঁকে বেনয়িমের অভিযোগে ২০১৬ সালে অপসারণ করেছিল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এর পরে তৎকালীন সহ-উপাচার্য স্বপনকুমার দত্তকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল বলে একান্ত আলোচনায় একাধিক বার জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকা মহল কিংবা কর্মী থেকে পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কখনও মন্ত্রক বলেছে, সাত-দশ দিনেই নতুন উপাচার্য ঠিক করে ফেলা হবে, আবার কখনও বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ পরে বিশ্বভারতীর জন্য ভাল খবর রয়েছে। কিন্তু, আড়াই বছর ধরে কোনও স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের খবর পাওয়া যায়নি।
স্বপনবাবু অবসর নেন এ বছর ২৭ জানুয়ারি। এক সপ্তাহ পরে, সেই অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবেই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বিশ্বভারতীর প্রবীণতম ডিরেক্টর সবুজকলি সেন। তখনও শিক্ষক, কর্মী এবং ছাত্রছাত্রী মহলে প্রশ্ন ওঠে, আবারও কি স্থায়ী উপাচার্যের জন্য প্রতীক্ষা করতে হবে?
তবে, ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর— এই কয়েক মাসের মধ্যেই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত স্থায়ী উপাচার্য পাওয়ায় খুশি সব মহল। তবে তাঁদের কিছু দাবি-দাওয়াও আছে। অধ্যাপকসভার সহ-সভাপতি কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বহুদিন পরে স্থায়ী উপাচার্য পেয়ে খুশি। তিনি যেন সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করে, সকলের মত নিয়ে কাজ করেন, এটাই চাইব।’’ বিশ্বভারতী কর্মিসভার সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটি দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আমাদের। তিনি বিশ্বভারতীর উন্নতির জন্য কাজ করুন, সমস্যাগুলো দূর করতে প্রয়াসী হন, এই আর্জি জানাব।’’ বিশ্বভারতী ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও সম্পাদক বিকাশচন্দ্র গুপ্ত আবার বলে দিচ্ছেন, ‘‘বিদ্যুৎবাবুকে আমরা অভিনন্দন জানাই। তবে খুব জটিল সময়ে উনি যোগদান করছেন।’’
তাঁদের আশা, স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে এই মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বভারতীতে নিয়োগ, পদোন্নতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে-সব সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেগুলির শীঘ্রই নিষ্পত্তি হবে।