Amar Boss

‘মুশকিলে ফেলে দিয়েছিল শিবু! কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরেছি’, ‘আমার বস’ নিয়ে অকপট রাখি

“শিবুর পেট আগে যায়, পিছনে যায় ওর মুখ! এটা নায়কসুলভ চেহারা?”, সেটে নায়ককে ধমক দিতেন রাখি গুলজ়ার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০০
Share:

এক মঞ্চে নন্দিতা রায়, রাখি গুলজ়ার, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

“একটা সময় মনে হল, অনেক কাজ করে ফেলেছি। আর নয়। তার পর দেখলাম, আমার সমসাময়িকেরা আশেপাশে কেউ নেই! ময়দান ফাঁকা। নতুনরা আসছেন। তাঁদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে...” এই সাতপাঁচ ভাবনা থেকে ১৪ বছর আগে বাংলা ছবির দুনিয়া থেকে বিরতি নিয়েছিলেন রাখি গুলজ়ার। কিন্তু মুম্বইয়ে শিবপ্রসাদের কাছে চিত্রনাট্য শুনে এক মুহূর্ত আর দেরি করেননি। রাখি জানিয়েছিলেন, তিনি পুরনোপন্থী। পরিচালককে বাড়িতে এসে চিত্রনাট্য পড়ে শোনাতে হবে। পরিচালকের চোখেমুখে চিত্রনাট্য পড়ার আবেগ দেখে তবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। বাকিটা ইতিহাস। নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদের ‘হামি’ তাঁর পছন্দের ছবি। গোয়ায় কথার ফাঁকে বললেন, " মেঘনাকে বলেছি ‘হামি’ দেখতে।"

Advertisement

গল্পে শিবপ্রসাদ তাঁর ছেলে। গোয়ায় ছবিটি প্রথম দেখানো হল মঙ্গলবার। কালো সিল্কের শাড়ির আঁচল ভাঁজে ভাঁজে কাঁধে ফেলা। ছোট করে ছাঁটা চুলে আজও তিনি উজ্জ্বল। তাঁর সোনালি ফ্রেমের চশমায় আভিজাত্য যেন চুঁইয়ে পড়ছে! রাখি গুলজ়ার। তিনি তাঁর নতুন বাংলা ছবির নেপথ্য কাহিনিতে মশগুল। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা।

পাশে হাসিমুখে নীরব দর্শক নন্দিতা। সব ক্ষেত্রেই তিনি এগিয়ে দেন শিবপ্রসাদকে। এ দিনও ব্যতিক্রম হল না। বিশেষ করে রাখি যেই তাঁর ‘পর্দার ছেলে’র দিকে আঙুল তুলে বললেন, “ওই শিবু...” ব্যস, নন্দিতা মাইক ঠেলে দিলেন তাঁর দিকে! শিবপ্রসাদ এই ছবিতে পরিচালক কম, অভিনেতা বেশি। তিনি হাসিমুখে বাকি গল্প প্রকাশ্যে আনলেন। “রাখিজির কাছে ঠিকানা জানতে চাওয়াও স্মরণীয়। সুকুমার রায় একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘ঠিকানা চাও, বলছি শোন...’ ‘তিনমুখো তিন রাস্তা গেছে তারই একটা ধরে...’। তিনিও ঠিক সেই ভঙ্গিমায় মুম্বইয়ে বাড়ির অবস্থান বুঝিয়েছিলেন।” রাখির স্বীকারোক্তি, “আমার ভাইয়ের নাম শিবু। ও আর নেই। তাই শিবপ্রসাদ ফোন করতেই ‘শিবু’ নামটা কানে বেজেছিল। ফেরাতে পারিনি।”

Advertisement

গল্প শোনানোর আগে হাঁটু কেঁপেছিল শিবপ্রসাদের। গল্প শোনার পরে গাল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় চোখের জল ঝরেছিল রাখি গুলজ়ারের। তিনি কেবল বলতে পেরেছিলেন, “ভাল ছবি।” সেই শুরু। তার পর সংলাপ নিয়ে, দৃশ্য নিয়ে, পোশাক নিয়ে খুঁটিনাটি আলাপ-আলোচনা। চলতি বছরের গোড়ায় শুটিং শুরু।

শুটিংয়ের গল্পও কি কম? ‘আমার বস’ ছবির নায়ক জানিয়েছেন, তাঁর পাতে আলু দেখলেই কড়া চোখে তাকাতেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। যুক্তি, পেট বেরিয়ে থাকে! এটা নায়কসুলভ চেহারা? শিবপ্রসাদকে পেট ঢুকিয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি যিনি খাবার পরিবেশন করছিলেন তাঁকে মৃদু ধমক, “ওকে এত আলু দিচ্ছ কেন?” ‘ছেলে’ যাতে বাড়িয়ে না বলে তার জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে থামিয়ে যোগ করলেন, “আমি ওকে বলতাম, তোমার পেট আগে যায়। আর মুখ পিছনে পড়ে যায়!” নিজের কথায় নিজেই হেসে সারা রাখি। হাসির গুঞ্জন গোটা সভাগৃহে।

পরক্ষণেই গলার স্বর গম্ভীর, “পর্দায় আমার ছেলে। শুটিংয়ের ফাঁকে অনেক শাসন করেছি। ক্যামেরা চালু হলেই আমরা কেবল অভিনেতা। আমি কী চাইছি বুঝে শিবু অভিনয় করত। ও কী করছে সেটা দেখে আমার অভিনয়।” সে কথা মেনে নিয়েছেন নন্দিতাও। বলেছেন, “রাখি এখানে অভিনয় করেননি। আপনা থেকেই এসেছে। এমনই ব্যক্তিত্ব, আমি কিছু বলেছি, বলেছেন, ‘করব না’। তার পর যা করলেন, অসাধারণ!” ব্যক্তিত্বের জ্বলন্ত উদাহরণ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী নিজেই সকলের সামনে রাখলেন, “আমার নাম রাখি মজুমদার। গুলজ়ার আমার স্বামীর নাম।”

ছবিতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ও রয়েছেন। রাখি তাঁকে নিয়েও উচ্ছ্বসিত। বললেন, “ছোটবেলায় ওঁর অভিনীত ছবি দেখেছি। এখন যথেষ্ট বয়েস হয়ে গিয়েছে। তার পরেও স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ। মুহূর্ত বুঝে সংলাপ বলা, অভিব্যক্তির প্রকাশ! আমি থমকে দেখতাম। শিবু হাঁ হয়ে যেত! ‘কী করে গেল রে বাবা!’” সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে নাকি বিস্ময় সামলে বিড়বিড় করতেন শিবপ্রসাদ।

রাখি গুলজ়ারের কাছে বাংলা ছবিতে প্রত্যাবর্তন মানে অনেকটাই ঘরে ফেরা। যদিও প্রযোজক-পরিচালকের দাবি, তিনি মুম্বইয়ের বাসিন্দা কিন্তু তাঁর বাড়িতে বাংলার মাটির গন্ধ। অভিনেত্রী হাসিমুখে সে সব কথা শুনেছেন। জানিয়েছেন, ‘আমার বস’ করতে করতে মনে হয়েছে, সমাজের সব তলার মানুষদের মনের ছবি প্রতিফলিত হয়েছে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের এই ছবিতে। বিশেষ করে বৃদ্ধাশ্রমের বিষয়টি। তাঁর মতে, বৃদ্ধাশ্রম বলে কিছু হয় না। অনেক দিন এই ধরনের ‘গল্প’ বলেন না কেউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement