ছন্দে: দোকান খুলেছে তারাপীঠ মন্দির চত্বরে। মঙ্গলবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
ওঁদের কেউ এসেছিলেন বিহারের ভাগলপুর থেকে। কেউ এ রাজ্যের শান্তিপুর থেকে। কারও বাস কলকাতার বালিগঞ্জে, তো কারও রায়গঞ্জে। প্রত্যেকে মঙ্গলবার সাতসকালেই হাজির তারাপীঠে একটাই মনবাসনা নিয়ে—একবার ‘মা তারা’র দর্শন করবেন। গর্ভগৃহে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কাউকেই। তবু বাইরে থেকে মায়ের দর্শন পেয়েই খুশি তাঁরা সকলে।
সব মিলিয়ে ৯৫ দিন পরে তারাপীঠ মন্দির চত্বর এ দিন ফের কিছুটা সরগরম ছিল দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে। আগের মতো ভিড় হয়নি ঠিকই, তবু লকডাউন পরবর্তী সময়ে মন্দির খোলার প্রথম দিনের হিসেবে যথেষ্ট সংখ্যক দর্শনার্থী এসেছিলেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী পুজো দিয়েছেন। চেনা ‘জয় তারা, জয় তারা’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।
এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় মঙ্গল আরতির পরে সেবায়েত বামাচরণ মুখোপাধ্যায় দর্শনার্থীদের জন্য ‘মা তারা’র গর্ভগৃহের দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার ঢের আগেই অবশ্য বিহারের জামুই থেকে আসা একই সংস্থার ১২ জন কর্মী পারস্পরিক দূরত্ব বিধি মেনে ‘মা তারা’র দর্শনের জন্য মন্দির চত্বরে বৃত্তাকার গণ্ডির মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে দীপক কুমার নামে এক জন দর্শনার্থী বললেন, ‘‘প্রতি বছর এই সময় মা তারার দর্শন করতে আসি। এ বছর লকডাউন পরিস্থিতির জন্য আসতে পারিনি। সামাজিক মাধ্যমে এবং সেবায়েতদের কাছ থেকে জানতে পারি ২৩ তারিখ মন্দির খুলছে। সেই জন্য গাড়ি ভাড়া করে রবিবারই চলে এসেছি।’’
একই ভাবে মন্দির খুলছে খবর পেয়ে ভাগলপুর থেকে সোমবার রাতে চার জন দর্শনার্থী তারাপীঠে এসেছেন। ঝাড়খণ্ডের দেওঘর, দুমকা থেকেও দর্শনার্থীরা গাড়ি ভাড়া করে সোমবার রাতে পৌঁছে গিয়েছেন। ঝাড়খণ্ড ছাড়াও পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, পুরুলিয়া শহর, হুগলির কোন্নগর, চন্দননগর, বালিগঞ্জ, শান্তিপুর, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, মেদিনীপুর শহর থেকে অনেকে ‘মা তারা’র দর্শন করতে এসেছিলেন। সকাল আটটার মধ্যে পুজো দেন রায়গঞ্জ পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পায়েল সাহা মণ্ডল। স্বামী-সহ পরিবারের ১২ জন সদস্যকে নিয়ে পুজো দিতে এসেছিলেন পায়েলদেবী।
ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শনার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলা শিকেয় উঠে যায়। এক সময় দেখা যায় মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে অনেকে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে আছেন। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার জন্য বারবার মন্দির চত্বরে থাকা কর্তব্যরত পুলিশকর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, সেবায়েতরা অনুরোধ করলেও কেউ বিশেষ গা করেননি তাতে। যদিও মন্দিরে প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্রিনিং, স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজ়ার টানেল পেরিয়ে নির্দিষ্ট লাইনে বৃত্তাকার গণ্ডির মধ্যে দাড়িয়েও গর্ভগৃহের সামনে এসে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেই ফেললেন, ‘‘মন্দির খুলে আরও বিপত্তি বাড়ল মনে হচ্ছে।’’
এক সেবায়েতও জানালেন, এক গুচ্ছ সুরক্ষা ব্যবস্থা পেরিয়েও দর্শনার্থীরা যে ভাবে দূরত্ব-বিধি না মেনে গর্ভগৃহের সামনে ‘মা তারা’র দর্শন করছেন, তাতে মন্দির আগামী দিনে খোলা হবে কিনা অবশ্যই আশঙ্কার বিষয়। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের অনেক সদস্য এক সঙ্গে পুজো দিতে এসে মাতারার দর্শন করেছেন। তাই মাঝেমাধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকেনি।’’