পঞ্চায়েত প্রধানের সামনে ঘরের জন্য বিক্ষোভ কীর্ণাহারে। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ শুরু হতেই চতুর্দিক থেকে অভিযোগের পাহাড় জমছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন প্রান্তিক মানুষেরা। কোথাও বৈধ প্রাপক বাড়ির অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাম বিভ্রাটে তো কোথাও টাকা তছরুপের অভিযোগ শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েত এবং নলহাটি ১ বিডিও অফিসে কার্যত এই কারণে বিক্ষোভে শামিল হলেন আবাস যোজনায় বাড়ির আবেদনকারীরা।
এ দিন সকালে কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখানো আবেদনকারীরা জানালেন, বার বার আবেদন করেও বাড়ি তৈরির অনুদান মেলেনি। অথচ একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে বরাদ্দ হয়েছে অনুদান। এমনকি দোতলা বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের নামেও বরাদ্দ হয়েছে অনুদানের টাকা।পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাড়ি তৈরির জন্য জবকার্ড, আধারকার্ড, বাড়ি তৈরির জন্য জমির কাগজপত্র-সহ দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। সেই দরখাস্ত অনুযায়ী পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অনলাইনে প্রায় ১,০০০ আবেদনকারীর নাম নথিভূক্ত করা হয়। সম্প্রতি উপভোক্তাদের নামের তালিকা পঞ্চায়েতে পৌঁছায়।
পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেই তালিকা টাঙিয়েও দেওয়া হয়। তালিকা ধরে পাড়ায় পাড়ায় সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। তার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আব্দুল আলি, ইব্রাহিম শেখ, ভাদু শেখেরা বলেন, ‘‘আমরা ৩-৪ বার করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের নাম আসেনি। অথচ ৩-৪ বার অনুদান পেয়েছে এমন পরিবারের নাম এসেছে। পাকাবাড়ির মালিকদেরও নাম আছে।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চায়েত প্রধান শিবরাম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ১,০০০ জন আবেদনকারী নাম নথিভুক্ত করেছিলাম। ৫০০ জনের নাম এসেছে। আসলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কিছু নাম বাদ গিয়েছে। সার্ভারের গোলযোগেও বাদ যেতে পারে।যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারলে পরে তাদের জন্যও অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে। তালিকায়একই পরিবারের একাধিক নাম বা পাকা বাড়িতে বসবাসকারীর নাম থাকলে সমীক্ষায় বাদ দেওয়া হবে।’’ নানুরের বিডিও শৌভিক ঘোষাল বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’
অন্যদিকে, একই অভিযোগে এদিন দুপুরে নলহাটি ১ বিডিওর দফতরে বিক্ষোভ দেখান কুরুমগ্রাম পঞ্চায়েতের মেহেগ্রাম, নতুনগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো আবেদনকারী। নতুন গ্রামের মহাদেব লেটদের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের কিছু নেতার মদতে বৈধ প্রাপকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন, নাম নথিভুক্ত করার সময় কারচুপি হচ্ছে। পাকা বাড়ি আছে এমন লোকেদের নাম তালিকায় তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা নজর এড়িয়ে যাচ্ছেন। অনুরোধ কুরুমগ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখুন এই অসহায় মানুষদের।’’ স্থানীয় শ্রীকৃষ্ণ লেটের দাবি এক শতকও জমি নেই মাটির বাড়ি তাঁর। তাও তাঁর নাম তোলাহচ্ছে না।
নলহাটি ১ এর বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ আবাস যোজনার বাড়ির জন্য এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, শুনেওছি। বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।’’