শাসকদলের বিজয়মিছিল থেকে বিরোধীদের দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনা অব্যাহত পুরুলিয়ায়।
বরাবাজারের জয়নগর, নিতুড়িয়ার সড়বড়ি, পাড়ার উদয়পুর, কাশীপুরের ভালাগড়ার পরে সেই তালিকায় নবতম সংযোজন ফের পাড়া। বুধবার তৃণমূলের বিজয়মিছিল থেকে হামলা হল সিপিএমের পাড়া জোনাল কার্যালয়ে। অভিযোগ বন্ধ কার্যালয়ের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বাইরে থেকে পাথর ছুড়ে ভেঙে দেওয়া হয় দোতলার সমস্ত জানলার কাচ। তবে ঘটনা হল এ দিন পুলিশের সক্রিয়তার জন্যই আরও বড় ঘটনা ঘটেনি। মিছিলের সঙ্গে থাকা পুলিশকর্মীরা সিপিএমের ওই কার্যালয় থেকে বের করে দেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের। তৃণমূলের অভিযোগ, পুলিশ তাদের কর্মীদের উপরে লাঠি চালিয়েছে। শাসকদলের অভিযোগ পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন পাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কৈলাস মাহাতো। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর অভিযোগ মানতে চায়নি। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলে পাড়া এলাকার শাসকদলের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বার কিন্তু নির্বাচনের ফল গণনার পরে তৃণমূল বিশাল সাফল্য পাওয়ার পরেই রাজনৈতিক বদলা নেওয়ার ঘটনা ঘটতে শুরু হয়েছে রাজ্যের এই প্রান্তিক জেলায়। কয়েকদিন আগেই কাশীপুরের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের ভালাগড়া গ্রামে সিপিএমের একটি অঞ্চল কার্যালয় দখলের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তার আগের দিন পাড়ার মতোই বিজয়মিছিল থেকে ওই কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগে জড়ায় শাসকদল। পরের দিন কার্যালয়টি দখল করে নেয় তৃণমূল। কাশীপুরের ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই পাড়ায় সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটল।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পাড়ায় বিজয়মিছিল শুরু করে তৃণমূল। ছিলেন বিধায়ক উমাপদ বাউরি-সহ ব্লকের নেতারা। পুলিশের হিসাবেই হাজার আড়াই লোক হয়েছিল মিছিলে। তার পুরোভাগ যখন থানার কাছাকাছি, সেইসময়েই মিছিলের শেষদিক থেকে মূল রাস্তার উপরে থাকা সিপিএমের ওই দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। সিপিএমের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের মিছিল থেকে হঠাৎই পাথর ছোড়া শুরু হয় কার্যালয়ের উপরে দোতলায় জানলা লক্ষ করে। এরপরে তৃণমূলের লোকজন কার্যালয়ের দু’টি দরজা ভাঙতে শুরু করে। একটি দরজা পুরোপুরি ভেঙে ভিতরে ঢুকে একটি ঘরের চেয়ার, টেবিল, লাইট ভাঙচুর করে।’’
এ দিন ওই পার্টি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি দরজাই প্রায় ভাঙা। ভিতরের একটি ঘরের চেয়ার, টেবিল, লাইট ভাঙা অবস্থায় চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। দোতলার জানলার একটি কাচও অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ দ্রুত সিপিএমের ওই কার্যালেয় উপস্থিত হয়। তৃণমূল কর্মীদের কার্যালয় থেকে লাঠি চালিয়ে বের করে দেয় পুলিশ। পরে অন্যান্য থানা থেকে আরও পুলিশকর্মী পাড়া পৌঁছয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর থেকেই সিপিএমের ওই কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সিপিএমের একাংশ বলছেন, এ দিন পুলিশ সক্রিয় না হলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত। বিকেলের দিকে পাড়া থানায় সিপিএমের তরফে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়। এসডিপিও অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা জাড়িত বলে মানতে নারাজ পাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর দাবি, ‘‘এ দিনের ঘটনায় আমাদের দলের কর্মীরা কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। সিপিএম দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকে পাড়ায় ব্যাপক অত্যাচার করেছে। যাঁরা অত্যাচারের শিকার তারাই এ দিন হয়তো ক্ষুব্ধ হয়ে সিপিএমের পার্টি অফিসের দিকে পাথর ছুড়েছেন। ঘটনাক্রমে ওই সময়ে আমাদের বিজয়মিছল যাচ্ছিল। তাই সিপিএম তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে।” তবে ওই হামলা তৃণমূলের মিছিল থেকেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
পাড়ার ওই কার্যালয়েই বসেন সিপিএমের তরফে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই শাসকদল বিরোধীদের উপরে আক্রমণ শুরু করেছে। পাড়ায় আমাদের দলীয় কার্যালয়ের উপরে হামলা তাই ব্যাতিক্রমী ঘটনা নয়। নির্বাচনে জেতার পরে তৃণমূল বিরোধী কন্ঠস্বরকে দমন করতে চাইছে।”