অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
জমি বিতর্কে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ীর বাড়ি ‘প্রতীচী’তে যান মমতা। সেখানে অমর্ত্যের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘অমর্ত্যদাকে বিজেপি যেন অপমানের চেষ্টা না করে।’’ জমি বিতর্কে নোবেলজয়ী যে কথা বলেছেন, তা ‘ঠিক’ বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি নথি দেখিয়ে দাবি করেন, অমর্ত্যের বক্তব্যই ঠিক, বিশ্বভারতীর নয়। এটাকেই ‘ছক্কা’ মারার সঙ্গে তুলনা করেন মমতা। বলেন, ‘‘আমি ছোট্ট একটা ছক্কা মেরে গেলাম।’’
বিজেপি এবং বিশ্বভারতীকে বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কোর্ট-কাছারি করে সব হবে না। জনতার আদালতও রয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর আশা করি এ ভাবে যথেচ্ছচারিতার খোঁজ নিয়ে দেখবে। বিজেপি করলে সাত খুন মাপ হতে পারে না।’’
জমি দখলের অভিযোগ ঘিরে অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাত চরমে উঠেছে। জমি বিবাদের মধ্যেই শনিবার একটি সরকারি নথি (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে। প্রকাশ্যে আসা সরকারি নথির প্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্য সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ়ে রয়েছে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক সূত্রেরও দাবি ছিল, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই। তার প্রেক্ষিতেই রবিবার বিশ্বভারতী দাবি করেছে, ১৯৪৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আশুতোষকে ১.২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিল বিশ্বভারতী। ১.৩৮ একর নয়। মমতা অবশ্য অন্য দাবি করেছেন। সেই দাবির স্বপক্ষে নথিও দেখিয়েছেন।
সোমবার প্রথমে নোবেলজয়ীর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অমর্ত্যের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ২৪ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তিনি নাকি ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন। আমি ক’দিন ধরে অনেক ভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশ্বভারতীকে যখন জমিটা দেওয়া হয়েছিল সেই কাগজ আমি নিয়ে এসেছি।’’ এর পরই ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন দাগের কোন জমি দিয়েছিল তার বিবরণ পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘যে জমিটা লিজ়ে দেওয়া হয়েছিল তা ১.৩৮৮ একর। আর ওরা (বিশ্বভারতী) বলছে ১.২৫ একর। ‘এল আর’ রেকর্ড বলছে, ১.৩৮ একর। তাই অমর্ত্য সেন ঠিক বলছেন। ১৯৫৬ সালের ‘আরএস’ রিপোর্টেও একই তথ্যা রয়েছে।’’ এই তথ্য প্রকাশ করেই মমতা ‘ছক্কা মারার’ কথা বলেন।
বিশ্বভারতীতে শিক্ষায় গুরুত্ব না দিয়ে, গৈরিকীকরণের লেফট-রাইট প্যারেড হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন।