novel coronavirus

নগদ-ঘাটতি ব্যাঙ্কে, দাবি সুরাহা করার

সম্প্রতি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন কিছু গ্রাহক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৩:২০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। খোলা শুধু ওষুধ, মুদির দোকান আর আনাজের বাজার, পেট্রল পাম্প। এ দিকে ‘লকডাউন’-এর জেরে বিক্রিবাটাও কমেছে দোকানগুলিতে। তারই জেরে ব্যাঙ্কের নগদ টাকার জোগান কমে গিয়েছে কয়েক গুণ। কয়েকদিন পরেই মাস শেষ হচ্ছে। তখন মাস পয়লার বেতন ও পেনশন নিতে ব্যাঙ্কে আসবেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তেরা। এই পরিস্থিতিতে নগদের জোগান না থাকায় কী ভাবে পেনশন ও বেতন দেওয়া যাবে, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন পুরুলিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির আধিকারিকেরা। তবে, জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সৌরভ লাহা শুক্রবার আশ্বাস দেন, ‘‘ব্যাঙ্কে নগদ টাকার জোগান কম থাকলেও বেতন ও পেনশন দিতে আরবিআই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’

Advertisement

আর্থিক বছরের শেষে এমনিতেই ব্যাঙ্কগুলিতে নগদ টাকার জোগান বছরের অন্য মাসের তুলনায় কিছুটা কমই থাকে। তার সঙ্গে এই মাসে যোগ হয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে ‘লকডাউন’। যার জেরে, গত ২২ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে বন্ধ জেলার দোকানপাট ও বাজার। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, সেই অর্থে পুরুলিয়াতে শিল্প না থাকায় জেলার ব্যাঙ্কগুলিতে অর্থের জোগান আসে মূলত ব্যবসায়ী মহল থেকেই। বড় ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কে জমা করা মোটা অঙ্কের টাকাই নগদের অনেকটাই জোগান দেয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য রকম।

জেলার আদ্রা, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া শহরের কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রে এ দিন জানা যাচ্ছে, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাজার থেকে ব্যাঙ্কে নগদের জোগান কমেছে কয়েক গুণ। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে তা স্পষ্ট পেট্রল পাম্পের মালিকদের বক্তব্যেও। ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের জোগানের একটা বড় অংশ আসে পেট্রল পাম্প থেকে।

Advertisement

রঘুনাথপুরের একটি পেট্রল পাম্পের মালিক সুকুমার মণ্ডলের দাবি, ‘‘গত এক সপ্তাহে পেট্রল ও ডিজেলের বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাংশে। জনতা কার্ফুর দিন থেকে পাম্পে বড় পণ্যবাহী গাড়ি ডিজেল ভরতে আসছে না। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মোটরবাইকে পেট্রল বিক্রি হচ্ছে। জরুরি পরিষেবা হওয়াতে অ্যাম্বুল্যান্সের মতো কিছু গাড়িকে তেল দেওয়ার জন্য পাম্প খোলা রাখা হয়েছে।”

সূত্রের খবর, নগদের জোগান কমে যাওয়ায় এবং কর্মীদের পালা করে কাজ করানোর জন্য গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কগুলিকে সপ্তাহে এক দিন অন্তর খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে, ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে।

সম্প্রতি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন কিছু গ্রাহক। তাঁদের মধ্যে রায়ডির শেখ নাজিম, বেড়োর হাফিজুল হোসেন, গুন্দলুভিটার ঠাকুর মহাশয় মুর্মুর ক্ষোভ, ‘‘পর পর দু’দিন ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। প্রথম দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। পরের দিন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানালেন, টাকা নেই। এই অবস্থায় আমাদের কী ভাবে সংসার চলবে?”

এমন অভিযোগও উঠছে, ব্যাঙ্কে যে পরিমাণ টাকা তুলতে চাইছেন গ্রাহকেরা, সে টাকা অনেক ব্যাঙ্কই দিতে পারছে না। রঘুনাথপুরের চেরপাহাড়ির বাসিন্দা, পেশায় ইটভাটা ব্যবসায়ী মনোজ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘লকডাউনের জন্য ভাটা বন্ধ। কিন্তু এই অবস্থায় শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রাখা মানবিক কারণেই সম্ভব নয়। সে জন্য টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়েও পুরো টাকা পাওয়া যায়নি।”.

ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের জোগানের অভাবের সমস্যার কথা মানছেন পুরুলিয়ার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজারও। তিনি জানান, সামগ্রিক ভাবে ‘লকডাউন’ হওয়ার কারণেই বাজারহাট, দোকানপাট প্রায় পুরোটাই বন্ধ। কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী ব্যাঙ্কে টাকা জমা করছেন। কিন্তু তাতে নগদের জোগানে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এই সমস্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে ব্যাঙ্কগুলি। তবে সৌরভবাবুর আশ্বাস, ‘‘এই অবস্থায় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ফলে, ব্যাঙ্কে নগদের জোগান বাড়বে। গ্রাহকেরা টাকা পাবেন। বেতন ও পেনশন পেতেও সমস্যা হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement