রঘুনাথপুর থানার সামনে দুই পক্ষের হাতাহাতি। নিজস্ব চিত্র
শাসকদলের বিধায়ককে হেনস্থার অভিযোগে বিজেপির দু’জনকে গ্রেফতার করল রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক জন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। অন্য জন সাধারণ কর্মী। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় গ্রামের বাসিন্দা একটি মণ্ডলের সভাপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুকনী গ্রামের বাসিন্দা, কর্মী বিধান ঘোষালকে রবিবার রাতে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন তাদের রঘুনাথপুর আদালতে হাজির করানো হলে দু’জনেরই দু’দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
সোমবার ধৃতদের আদালতে হাজির করানোর সময়ে উপস্থিত বিজেপির কর্মী, সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়ে তৃণমূলের কর্মীরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ মানতে চায়নি শাসকদল।
রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার পাড়ার তৃণমূলের বিধায়ক উমাপদ বাউরিকে বিজেপির এক দল কর্মী হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতের খাটরা গ্রামের অদূরে ওই হেনস্থা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের তরফে দাবি, বিধায়ক দলীয় কাজে পাড়া থেকে রঘুনাথপুর ২ ব্লকে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে গাড়ি থামিয়ে হেনস্থা করা হয়। ওই ঘটনার একটি ছবি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, বিজেপির কর্মীরা বিধায়কের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। উমাপদবাবুর হাতে জোর করে বিজেপির পতাকা ধরানোর চেষ্টা করছেন কয়েক জন।
দুপুরের ওই ঘটনার পরে রাতে বিজেপির ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে রঘুনাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বিধায়ক। শুধু হেনস্থা করাই নয়। বিজেপির কর্মীরা তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন উমাপদবাবু। এ দিন বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, ‘‘ওঁরা তো আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।”
িধায়কের অভিযোগ পাওয়ার পরেই দ্রুত বিজেপির এক নেতা ও এক কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা সহ অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। স্বভাবতই এ দিন আদালতে বিজেপির কর্মীদের জামিনের আবেদন খারিজ হয়। পুলিশ ধৃতদের দু’দিনের হেফাজতের আবেদন করেছিল।
তবে পুরো ঘটনাকে সাজানো বলে পাল্টা দাবি করেছে বিজেপি। নেতৃত্বের অভিযোগ, শাসকদল পুলিশ, প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে পুরুলিয়ায় গণতন্ত্রকে দমানোর কাজে নেমেছে। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিধায়ককে কেউ হেনস্থা করেনি। পুরোটাই শাসকদলের সাজানো গল্প।’’
রবিবারের বিধায়ককে হেনস্থার খবর চাউর হতে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে। এ দিন সকালে তৃণমূলের রঘুনাথপুর ২ ব্লক সহ আশেপাশের কয়েক’টি ব্লকের কর্মী, সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন রঘুনাথপুর থানার অদূরে। অন্য দিকে, বিজেপির কিছু কর্মী ছিল আদালতের সামনে। হঠাৎই তৃণমূলের কর্মীরা বিজেপি কর্মীদের মারধর করতে শুরু করে বলে অনেকের দাবি। কেউ পালিয়ে যান। কেউ আবার ঢুকে পড়েন আদালতে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগরবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিনা প্ররোচনায় তৃণমূলের লোকজন কর্মীদের মারধর করেছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক উমাপদবাবু বলেন, ‘‘আমাকে হেনস্থা করার ঘটনায় বিজেপির যারা যুক্ত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে থানার সামনে অবস্থান করছিলেন দলীয় কর্মীরা। তখন বিজেপির কর্মীরাই চড়াও হয়ে মারধর করে।”