পসরা: সোনাঝুরিতে পর্যটকেরা কেনাকাটা করছেন। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতির জের বসন্তোৎসব হয়নি। নিয়মিত পর্যটন আনাগোনাও কার্যত বন্ধ ছিল বেশ কয়েক মাস। দিশাহারা অবস্থায় ছিলেন বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষ। পুজোর ছুটিতে পর্যটকের আনাগোনা কিছুটা বাড়তে সাময়িক স্বস্তিতে তাঁরা। শীতের মরসুমে ব্যবসা আরও ভাল হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
লকডাউনে শুরু থেকেই পর্যটকশূন্য হয়ে গিয়েছিল বোলপুর শান্তিনিকেতন। সরকারি নিয়ম মেনে হোটেল-রিসর্টগুলি জুন মাস থেকে খুলে দেওয়া হলেও একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে পরিবহণ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে তেমন ভাবে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়নি। তাই হোটেল রিসর্ট ব্যবসা থেকে শুরু করে হস্তশিল্পের বাজার— সবকিছুই ব্যাপক মার খাচ্ছিল। ব্যবসায়ীরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কবে থেকে আবার সমস্ত কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। তাই পুজোর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা করছিলেন বহু ব্যবসায়ী। পুজোয় প্রতিদিন গড়ে হাজার খানেকর উপর পর্যটক আসায় কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আগে ছোটখাটো হোটেলগুলিতেও মাসে কুড়ি থেকে তিরিশ হাজার টাকা এবং মাঝারি ও বড় রিসর্টগুলিতে মাসে কমপক্ষে লাখ খানেক টাকার ব্যবসা হতো। এই পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, হোটেলের খরচটুকুও উঠছিল না। আগে এক মাসে যেখানে প্রতিদিন হোটেলে কমপক্ষে ১৮০ থেকে ২০০ পর্যন্ত পর্যটক বাইরে থেকে এসে থাকতেন, সেখানে গত কয়েক মাসে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল। পুজোয় সেই সমস্ত হোটেল, রিসর্টগুলিতে পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লকডাউনে যেখানে হোটেলের দেখভালের খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছিল, সেখানে পুজোর সময় ছোট-বড় কমবেশি সবকটি হোটেল, রিসর্ট মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার উপর প্রতিদিন ব্যবসা হয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ী পরিমল সাহা, গণেশ ঘোষ, প্রসেনজিৎ চৌধুরীরা বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় থেকে তেমনভাবে পর্যটক না আসার কারণে চরমভাবে মার খাচ্ছিল ব্যবসা, কিন্তু পুজোর সময় এবার কিছু পর্যটক আশায় পুজো কয়েকদিন ব্যবসা তুলনামূলকভাবে ভাল হয়েছে।’’ তবে পুজো চলে যেতেই আবারও পর্যটক আসা ও হোটেল বুকিং এক
প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, ট্রেন পরিষেবা কিছুটা স্বাভাবিক হলেই আবারও পর্যটকেরা আসতে শুরু করবেন।
একই কথা শোনা গিয়েছেন হস্তশিল্প ব্যবসায়ীদের মুখেও। দীর্ঘ লকডাউনের সময় তাঁরাও চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। পুজোর কয়েকদিন পর্যটক হওয়ায় অবশেষ সেই মন্দা বাজার কেটেছে তাদেরও। পুজোর ক’দিন তাদেরও গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার হস্তশিল্পের সামগ্রীর বিক্রি-বাটা হয়েছে। হস্তশিল্প ব্যবসায়ী আমিনুল হুদা, অরুণ পাল, গৌতম গড়াইরা বলেন, ‘‘লকডাউন জুড়ে বাজারের যা অবস্থা ছিল সেই তুলনায় পুজো কয়েকদিন পর্যটক আসায় বেচাকেনা ভালই হয়েছে।’’
পুজোর সময় রাস্তার ধারে খাবারের দোকান করেছিলেন বিমল পাল, সঞ্জু সাউরা। তাঁরা বলেন, ‘‘পর্যটকদের আশায় রাস্তার ধারে দোকান করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত কিছু পর্যটক হওয়ায় ব্যবসায় মন্দা কেটেছে। শীতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে আমরাও ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে পাবো।’’