প্রতীকী ছবি।
পুরসভায় ‘চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল’ নেই। এ পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায় বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। শুক্রবার এ নিয়ে তৃণমূলের শহর কমিটির কাছে নির্দেশিকা পাঠান জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। পরে, দলের নয় কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেন রঘুনাথপুর শহর সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতা। সৌমেনের দাবি, ‘‘পুর-শহরের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই উদ্যোগ।” ঘটনা ঘিরে শাসক দল পুরসভায় ‘দলতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছে’ অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, সামগ্রিক ভাবে পুর-প্রশাসনের মাথায় রাখা হয়েছে পুরপ্রধান তরণী বাউড়িকে। পুরসভার হিসাব সংক্রান্ত দফতরও দেখভাল করবেন তিনি। আয় বিষয়ক দফতর দেখভাল করবেন উপ-পুরপ্রধান স্বপ্না চক্রবর্তী। পূর্ত দফতর দেখবেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তশেখর ঘোষ। জল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রণব দেওঘরিয়াকে। বিদ্যুৎ দফতরের দায়িত্বে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় পরামানিক, জনস্বাস্থ্য ও নিকাশির দায়িত্বে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মালবিকা সাঁই ও স্টোরের দায়িত্বে থাকবেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনন্দ বাউড়ি। সঙ্গে পুরশহরের শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়া বাগদিকে। পুরসভা সূত্রে খবর, পুর-এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের বাস, পুরসভার নিজস্ব আয়-সহ আরও কিছু বিষয়ের মাপকাঠিতে চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল গঠন করা যাবে না, তা স্থির হয়। রঘুনাথপুর পুরসভায় সেই শর্তগুলি পূরণ না-হওয়ায় কাউন্সিল গঠন সম্ভব নয়।
এ বারের নির্বাচনে পুরপ্রধান বাদে, সকলেই প্রথম বার নির্বাচনে জিতেছেন। পুরসভা পরিচালনার অনভিজ্ঞতা যাতে শহরের উন্নয়নের কাজে প্রভাব না-ফেলে, সে জন্য এই পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছেন জেলা সভাপতি সৌমেন। তাঁর কথায়, ‘‘রঘুনাথপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল গঠন সম্ভব নয়। একক ভাবে সব দফতরের কাজকর্ম পুরপ্রধানের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়। তাই কাউন্সিলরদের বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সাহায্য করবেন আরও দু’জন কাউন্সিলর।” অনেকটা চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলরের ধাঁচেই কাজ হবে, দাবি তাঁর।
তবে তৃণমূলের এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে বিরোধীদের প্রশ্ন, কী ভাবে দলীয় ভাবে পুরসভার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে শাসক দল। কংগ্রেসের রঘুনাথপুর শহর সভাপতি তারকনাথ পরামানিকের অভিযোগ, ‘‘এ ধরনের কোনও কমিটি তৈরির প্রয়োজন হলে, তা সরকারি ভাবেই হয়ে থাকে। তাতে বিরোধী দলের সদস্যেরাও থাকেন। তৃণমূল এখানে পুরসভায় দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ কাজ করেছে। আমাদের আশঙ্কা এর পর থেকে বিরোধীদের পুরসভার কাজকর্মে ব্রাত্য রাখা হবে।” বিজেপি কাউন্সিলর দীনেশ শুক্লারও অভিযোগ, “এমনিতেই পুরসভায় তৃণমূল দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ঘটনা তার নতুন সংযোজন।”
তৃণমূলের শহর সভাপতি বিষ্ণু মেহেতার অবশ্য দাবি, ‘‘এ পদক্ষেপ জেলা সভাপতি করেছেন শহরের উন্নয়নের স্বার্থে। বিরোধীরা উন্নয়নমূলক কোনও সদর্থক প্রস্তাব দিলে, তা সর্বদাই স্বাগত।”