দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত বিষ্ণুপুরের পুর-প্রশাসক অর্চিতা বিদ। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের পুরসভাগুলিতে ভোটের দিনক্ষণ এখনও জানানো হয়নি। তবু, দেওয়ালে ভোট-প্রচারের পাশাপাশি শহরবাসীর মন বুঝতে রবিবার জনসংযোগে নেমেছিলেন বিষ্ণুপুরের পুর-প্রশাসক, তৃণমূলের অর্চিতা বিদ এবং শাসক দলের নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, শহরবাসীর অনেকের বক্তব্যে পুর-পরিষেবা নিয়ে ‘ক্ষোভের আঁচ’ মিলেছে। এতে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন নেতাদের অনেকেই।
তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণগঞ্জ রথতলা, মলডাঙা, রুদ্রপাড়ায় জনসংযোগে নেমেছিলেন। প্রার্থী যেই হোন না কেন, আগামী পুরভোটে ঘাসফুল চিহ্নে ভোট দিতে এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানান তৃণমূল নেতৃত্ব। পুর-প্রশাসককে সামনে পেয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন অনেকে। তাঁদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রচার শেষে পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করানোর আবেদন জানিয়ে দেওয়াল লেখেন তৃণমূল কর্মীরা। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই শাসক দলের জনসংযোগ কর্মসূচিকে ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী তন্ময় ঘোষ। যদিও, পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। বিধানসভা ভোটের নিরিখে বিষ্ণুপুর শহরে ১৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। দু’টিতে তৃণমূল। ভোটের এই প্রবণতা বজায় থাকলে পুরভোটে তাদের বেগ পেতে হবে বলে আশঙ্কা শাসক দলের একাংশের। এ দিন প্রচারে তারই ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানাচ্ছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাদের কেউ কেউ।
শহরের ১২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা নমিতা দাস তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেন, আধার কার্ডের সমস্যার কারণে তিনি রেশন পাচ্ছেন না। শুভজিৎ রুদ্র নামে আর এক বাসিন্দার অভিযোগ, দু’বছর আগে যমুনাবাঁধ থেকে রাস্তা তৈরির কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। এখনও সে রাস্তা তৈরি হয়নি। বছর ছিয়াত্তরের কালীপদ রুদ্র এবং পঁয়ষট্টি বছরের অসিত রুদ্রের আক্ষেপ, এখনও তাঁরা বার্ধক্য ভাতা পান না। তাঁতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁরা। কর্মক্ষমতা হারিয়ে এখন বাড়িতে বসে থাকতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘একের পর এক ভোট আসে, আবার চলেও যায়। কিন্তু আমাদের সমস্যার সুরাহা হয় না।’’ অনেকের প্রশ্ন, ন্যূনতম সরকারি পরিষেবার আশা করা কি খুব অন্যায়?
প্রচারে বেরিয়ে কী অভিজ্ঞতা হল? অর্চিতা বলেন, “সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনে তা মেটানোই আমাদের কাজ। এর জন্যই নির্বাচনের আগেই প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ছোটখাট সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা বড় হলে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হবে।” এ দিনের জনসংযোগ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম গোস্বামী, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুর টাউন সভাপতি সুনীল দাস, প্রাক্তন পুর-প্রশাসক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের জনসংযোগ কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপির নগর মণ্ডল সভাপতি উত্তম সরকারের অভিযোগ, “পুরসভা মানুষকে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। নিকাশি নালা ও ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি থেকে রাস্তা নির্মাণ বা আবাস যোজনায় ঘর দেওয়া—কিছুতেই সফল নয় তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। দলটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। মানুষ বিকল্প চাইছেন। গত বিধানসভা ভোটেই তাঁরা তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর টাউন সভাপতি সুনীল দাসের দাবি, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে পুরসভা যা কাজ করছে, তা আগে হয়নি। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। ওটা আছে বিজেপিতে। বিষ্ণুপুরবাসী পুরবোর্ডের উপরে আস্থা রাখছেন বলেই বিজেপির এত ভয়।’’ সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষেরও টিপ্পনী, ‘‘ভোট এলেই শহরের গরিব মানুষের কথা মনে পড়ে তৃণমূলের। আশ্বাস দিতে শুরু করে ওরা। এই পর্যটন শহর দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে রয়েছে। শহরের মানুষ সব বুঝতে পারছেন।’’