গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে তাদের অ্যাকাউন্টে। তাই কি উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অনুপস্থিত তারা? উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্ট শুরু হওয়ার পরে বেশ কিছু স্কুলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেনি। শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, ট্যাবের টাকা ওই পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাওয়ার পরেই তারা স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছে। ট্যাব আগামী বছর থেকে একাদশ শ্রেণিতে দেওয়া শুরু হবে। সেই সূত্রেই শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, আগামী বছর একাদশ শ্রেণিতে স্কুলছুট বাড়বে না তো?
মগরাহাটের মল্লভপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “আমাদের স্কুলে ৯০ জন টেস্টের পরীক্ষার্থীর মধ্যে ন’জন অনুপস্থিত। ওই পড়ুয়ারা পুজোর ছুটির আগে পর্যন্ত স্কুলে এসেছে। পুজোর ছুটির ঠিক আগেই ট্যাবের টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। তার পর থেকে আর ওরা স্কুলে আসেনি। টেস্টেও বসল না। আমার মনে হয় ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরেই ওরা স্কুলে আসা ছেড়ে দিল।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচুয়াখালি হাইস্কুলের শিক্ষক কিংশুক হালদার জানান, তাঁদের স্কুলে ১০২ জনের টেস্টে বসার কথা ছিল। সেখানে ২৭ জন মতো পড়ুয়া টেস্টে বসছে না। কিংশুক বলেন, ‘‘এরা কি পড়াশোনা চালাবে? কারণ, টেস্ট দিচ্ছে না মানে ধরে নেওয়া যায় উচ্চ মাধ্যমিক দেবে না। ট্যাব পেয়েই পড়াশোনার ইতি টানল হয়তো।’’
মুর্শিদাবাদের নবপল্লি জেসিএস হাইস্কুলের শিক্ষক রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ১৮৩ জনের উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট দেওয়ার কথা। এ বার টেস্টে অনুপস্থিত ৬৩ জন। ওরা সবাই কিন্তু ট্যাব পেয়েছে। ট্যাবের ১০ হাজার টাকা টাকা ঢোকার পরেই ওরা স্কুলে অনুপস্থিত।’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘বহু স্কুল থেকেই শুনতে পাচ্ছি, এ বার টেস্টে ৩০ শতাংশ বা তার বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলে ১৭২ জনের টেস্টে বসার কথা।
সেখানে অনুপস্থিত আছে ৫৫ জন। এদের সকলের অ্যাকাউন্টে কিন্তু ট্যাবের ১০ হাজার টাকা ঢুকেছে। এর আগেও ট্যাবের টাকা ঢোকার পরে পড়ুয়াদের স্কুল ছাড়ার উদাহরণ আমরা পেয়েছি। ট্যাব কোনও ভাবেই স্কুলে পড়ুয়াদের আটকে রাখতে পারছে না। বরং ট্যাবের টাকা ঢোকার পরে অনেক ড্রপ আউট হয়ে যাচ্ছে।’’
চলতি বছর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা ঢুকেছে। যে সব একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢুকল তারা সবাই স্কুলে আসছে কিনা তা নজর রাখছেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর বক্তব্য, অনেকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ট্যাবের টাকা পড়ুয়াদের না দিয়ে বরং স্কুলে স্কুলে স্মার্ট ক্লাসের পরিকাঠামো তৈরি করা হোক। তা হলে সার্বিক বিকাশ হবে। কিন্তু সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা হয়নি।
যদিও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, প্রতি বারই টেস্টে নানা কারণে কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। ট্যাবের টাকা ঢোকার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। ট্যাব বিপুল সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ার পড়াশোনার কাজে লাগে।