—প্রতীকী চিত্র।
গ্রামের শেষ বাড়িতেও পানীয় জলের পাইপ চলে গিয়েছে। বিনামূল্যে জলের সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস কল দিয়ে জল পড়ে না। পড়লেও জলের ধারা দেখতে লাগে সুতোর মতো। এক বালতি জল ভরতেই দিন কাবার হয়ে যায়।
পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি এই অভিযোগ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তথ্য বলছে, জেলায় ১১,২৩,৩৯৭টি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৭,৬৯,৫০৭টি (৬৯%) বাড়িতে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি পর্যবেক্ষণ দল এখনও পর্যন্ত ৪,৩৭,১৪৪টি বাড়িতে গিয়ে দেখেছেন, সংযোগ থাকলেও প্রায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছয় না। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে জলচুরি বড় বাধা বলে মনে করছে এই কারিগরি দফতর। জেলা পরিষদের ওই দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, “প্রতিটি ব্লকে আট জনের একটি দল পর্যবেক্ষণের পরে রিপোর্ট তৈরি করছে। জল চুরি আটকাতে প্রথমে মানুষকে সচেতন করতে বলা হচ্ছে। তাতে কাজ না হলে স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এমনকি, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ করাও হতে পারে।’’
কী ভাবে জল চুরি হচ্ছে, ছবি-সহ জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের কাছে তুলে ধরেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। তাদের দাবি, মূলত তিনটি উপায়ে জল চুরি হচ্ছে। প্রথমত, বাড়িতে পাইপ লাইন ঢোকার পরেই ছোট পাম্পের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা হচ্ছে। পাম্পের মাধ্যমে পাইপ লাইনের জল টেনে ১০০০ বা ২০০০ লিটারের জলাধার ভর্তি করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রাস্তার পাইপ লাইন ফাটিয়ে শুধু বাড়ি নয়, অবৈধ ভাবে সংযোগ নেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন, গ্যারাজ, রাস্তার ধারে হোটেল, খাবারের দোকানেও। তৃতীয়ত, বাড়ির ভিতরে থাকা পাইপ লাইন ফাটিয়ে সেখান থেকে অন্য পাইপ যোগ করে গোয়াল ঘর, বাগান বা অন্য জায়গাতেও জল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার জেলাশাসক আয়েষা রানি এ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শুভলক্ষ্মী বসুর উপস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি বৈঠক হয়। সেখানে জানানো হয়, ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। প্রতিদিন এক জন বাসিন্দার ৫৫ লিটার জল প্রাপ্য। অথচ পাম্পের সাহায্যে জল চুরি করে ১০০০ বা ২০০০ লিটারের জলাধার ভর্তি করা হচ্ছে। পাইপ ফাটিয়ে পানীয় জল নিয়ে বাড়ি লাগোয়া জমিতে সেচের কাজেও লাগানো হচ্ছে। আবার পানীয় জল দিয়ে মোটর সাইকেল ধোয়াও হচ্ছে। সে কারণে সংযোগ থাকলেও গ্রামের সব বাড়িতে জল পৌঁছচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, গলসি ২, আউশগ্রাম ২, পূর্বস্থলী ১, কাটোয়া ১, ভাতার, রায়না ১, কাটোয়া ২ ব্লকে জল চুরির প্রবণতা বেশি। তবে সংযোগ থাকার পরেও নানা কারণে জল কম যাচ্ছে কেতুগ্রাম ১-২ ও মন্তেশ্বরে। তবে সংযোগ থাকার পরে জল পৌঁছনোর তালিকার উপরের দিকে রয়েছে, বর্ধমান ২, কালনা ২, মেমারি ১-২ ব্লক।